বর্ষা মৌসুম এলে প্রতিবছর আলোকদিয়ার বাসিন্দারা একই দুর্ভোগে পড়েন। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি কাদায় ডুবে যায়। এতে তিন মাসের বেশি সময় যান চলাচল একদম বন্ধ থাকে। বহু আবেদন নিবেদন করেও সড়কটি পাকা করাতে পারেননি গ্রামবাসী। 

ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নলকায় করতোয়া সেতুর পাশ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা আলোকদিয়ার গ্রাম পর্যন্ত চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে গ্রামবাসী পাঁচিলা বাজার, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, উল্লাপাড়া উপজেলা সদরে যাতায়াত করে থাকেন। গ্রীষ্ম মৌসুমে রাস্তাটি ধুলায় আচ্ছন্ন থাকে। বর্ষা মৌসুমের পুরোটা সময় থাকে কাদা। এ সময় যানবাহন চলাচল দূরের কথা হেঁটে চলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। দুর্ভোগ সয়ে কাদার মধ্যেই চলতে হয় কয়েক হাজার মানুষকে। রাস্তাটি পাকা করার জন্য স্থানীয়রা বহুবার জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে আবেদন করেছেন। কিন্তু আমলে নেয়নি কেউই। 

এ ব্যাপারে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান প্রশাসক উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো.

মারুফ হোসেন জানান, তিনি কিছু দিন হলো এই ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েছেন। রাস্তাটির দুরবস্থার কথা তিনি শুনেছেন। শিগগিরই রাস্তাটি পরিদর্শন করে পাকা করার জন্য তিনি প্রকল্প প্রণয়ন করবেন। 

গ্রামবাসী জানান, নলকা-আলোকদিয়ার সড়কটি বর্ষা মৌসুমে ডুবে থাকে আধ হাঁটু কাদায়। একবার বৃষ্টি হলে অন্তত সাতদিন চলে এর রেশ। বিশেষ করে, জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রাস্তায় যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। আলোকদিয়ার গ্রামের বাসিন্দা প্রায় সাত হাজার। গ্রামের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পাঁচিলা বদরুল আলম উচ্চ বিদ্যালয়, নলকা ফুলজোর ডিগ্রি কলেজ, আলোকদিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একাধিক মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। উপজেলা সদরেও যেতে হয় এ সড়ক দিয়ে। জুতা হাতে নিয়ে কাদা মাড়িয়ে পথচারীরা চলাচল করেন। 

আলোকদিয়ার গ্রামের শাহাজাদা হোসাইন, শাহজাহান শাহীন, নাসির উদ্দিন ও আব্দুল মোমিন জানান,  গ্রামবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে অনেকবার রাস্তাটি পাকা করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাতে সাড়া না পেয়ে পাঁচ বছর আগে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যেমে রাস্তায় মাটি ভরাট করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বন্যা ও বৃষ্টিতে সেসব মাটি ধুয়েমুছে গেছে। এখন আবার আগের মতো বেহাল হয়ে গেছে রাস্তাটি। আলোকদিয়ার গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে এই রাস্তা পেরিয়ে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে উঠতে হয়। বিশেষ করে, বৃষ্টির দিনে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

হাটিকুমরুল ইউনিয়নের ইউপি সদস্য চাঁন মিয়া রাস্তাটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে জানান, নলকা-আলোকদিয়ার রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদের। তিনি আলোকদিয়ার গ্রামবাসীর সঙ্গে নিজে উদ্যোগী হয়ে বহুবার এই রাস্তাটি পাকা করার জন্য উপজেলা পরিষদ ও তাঁর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গণআবেদন দিয়েছেন। বছরছয়েক আগে তদানীন্তন উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মারুফ বিন হাবিব রাস্তাটি পরিদর্শন করে পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি মারা যান। পরে আর কেউ এই রাস্তা সংস্কার বা পাকা করার উদ্যোগ নেননি।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ এই র স ত গ র মব স র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান