কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের আড়ালিয়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের নদের শাখায় দুই দফা সেনা অভিযানের পরও থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন। দিনের বেলা বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত চলে বালু উত্তোলন।

অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে আড়ালিয়া চরপাড়া এলাকার প্রায় ৫০ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের গাঙ্কুলকান্দি কবরস্থানটিও নদে চলে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আড়ালিয়া চরপাড়ার অন্তত ২৫-৩০টি পরিবারের বসতভিটা।

স্থানীয়রা জানান, কাপাসিয়া উপজেলার উত্তরের জনপদ টোকবাজার থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের এই শাখাটি দক্ষিণে তারাগঞ্জ বাজারের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে মিলেছে। কাপাসিয়ার টোক, বারিষাব, ঘাগটিয়া, সনমানিয়া ও দুর্গাপুর ইউনিয়নের পূর্বপ্রান্ত এবং নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বয়ে গেছে নদটি। এই নদে ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে নাব্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হয়। এখন আবার টোক ইউনিয়নের আড়ালিয়া এলাকা ও মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের গাঙ্কুলকান্দি এলাকার মাঝখানে নদের বালু উত্তোলন চলছে। টোক ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আড়ালিয়া গ্রামের আবু বকর সিদ্দীক কিরণ, গাঙ্কুলকান্দির আওয়ামী লীগ নেতা কাজল মৃধা ও লেবুতলা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জহিরুল ইসলাম মিলে এই বালু তুলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই উপজেলার ৩০-৩৫ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলায় মুখ খুলতে সাহস করছেন না কেউ। গত বছরের ৫ আগস্টের পর অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনী অন্তত দুইবার অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এর পর সপ্তাহখানেক আগে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সারারাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, এবার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে এসেছেন বালু উত্তোলনকারীরা। তাই কেউ কিছু করতে পারবে না বলে প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন তারা।

আড়ালিয়া গ্রামের কৃষক তানভীর আহম্মেদ শরীফ জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে তাঁর প্রায় দেড় বিঘা ফসলি জমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারি নকশায় নদের প্রস্থ ১২০ লিংক বা ৮০ ফুট। অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি নদে বিলীন হওয়ায় বেশকিছু জায়গায় প্রায় ৪০০ ফুট প্রশস্ত হয়ে গেছে। সাধারণত এ নদের গভীরতা ২০-২৫ ফুট। কিন্তু বালু উত্তোলনের ফলে বেশকিছু জায়গায় ৪৫-৫০ ফুট গভীর হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে অচিরেই শত শত বিঘা কৃষিজমি, পানের বরজ ও আড়ালিয়া চরপাড়ার ২৫-৩০টি বসতভিটা ভাঙেনের কবলে পড়তে পারে। এমনকি, হুমকির মুখে পড়বে নদের ওপর নির্মিত আড়ালিয়া-ভূঁইয়া বাজার সেতুও।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, আড়ালিয়া-টোক সড়ক থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে এ নদে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নেই, এমন জায়গায় বালুদস্যুরা ড্রেজার মেশিনটি বসিয়ে গাঙ্কুলকান্দিতে বালুর গদি স্থাপন করেছে। দিনের বেলা ড্রেজার মেশিন মনোহরদী অংশে রেখে দিলেও রাতে কাপাসিয়া অংশে এনে বালু তোলে। তাঁর ভাষ্য, আগে এই নদে প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। অপরিকল্পিত খননের ফলে গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো মাছ ধরা পড়ে না। তাছাড়া এখানে গোসল করতে এসে প্রায় প্রতিবছরই পানিতে ডুবে মানুষ মারা যায়। বিগত কয়েক বছরে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এখানে।

প্রধান অভিযুক্ত আবু বকর সিদ্দীক কিরণ জানান, ২০১৭ সালে মনোহরদীর কিছু লোক এ নদে ড্রেজিং কাজ শুরু করলে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে হাইকোর্টে রিট করে ড্রেজিং বন্ধ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নন এবং তাঁর জানামতে মনোহরদী অংশে ড্রেজারটি স্থাপন করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকার একটি মহল তাঁর নামে কুৎসা রটনা করছে বলে অভিযোগ তাঁর।

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাস্‌নীমের ভাষ্য, কয়েক মাস আগে ওই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়। আবারও খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ ঙ ক লক ন দ উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ