ফেনীতে বৃষ্টি থেমেছে। নেই নদীতে উজানের উপচে পড়া পানি। এ সময় ফেনীর তিন নদী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়ার ভাঙনের প্রকৃত চিত্র দেখতে সরেজমিনে বাঁধ এলাকায় যাচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙন সম্পর্কে যা জানা গিয়েছিল, বাস্তবে পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ। চার দিন ধরে বলা হচ্ছিল, তিন নদীর ১২২ কিলোমিটারের ২০টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। তবে গতকাল শনিবার রাত থেকে পাল্টাতে শুরু করেছে চিত্র। পাউবোর কর্মকর্তারা মাঠ ঘুরে এসে জানাচ্ছেন, অন্তত ৩৬টি স্থানে ভাঙন দেখেছেন তাঁরা। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে পুরো হালনাগাদ তথ্য পেলে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বন্যায় শনিবার রাত পর্যন্ত মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের পরশুরাম উপজেলায় ১৯টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ১৭টি স্থান মিলিয়ে ৩৬টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বাঁধের ভাঙন দেখা দেয়।

ভাঙনস্থলের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘পানি থাকায় ভাঙনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি। আগে শুধু ভাঙনস্থলের সংখ্যা জানতে পেরেছি। শুক্রবার থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘুরে ভাঙনের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান দিয়েছেন। সে জন্য ৪ দিন ধরে ২০টি ভাঙনের তথ্য থাকলেও এখন বেড়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১২২ কিলোমিটার অংশে অন্তত ১৯৫টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়, যা মেরামতে পাউবো খরচ করেছে ২৯ কোটি টাকা। অথচ কোনো সংস্কারই টেকসই হয়নি।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ সংস্কারে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। এ কারণে সুফল মিলছে না। এ ছাড়া পাউবোর কর্মকর্তারা ঠিকভাবে মাঠপর্যায়ে কাজ করেন না। প্রতিবছর বন্যায় বাঁধের কী পরিমাণ স্থান ভাঙতে পারে, পানি উন্নয়ন বোর্ড তা আগ থেকে নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেয় না। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা যদি নিয়মিত বাঁধের স্থানগুলো পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করতেন, তাহলে বন্যার আগে স্থানীয় লোকজন সতর্ক হতে পারতেন। জানমালের ক্ষতি কমত।

মুহুরী নদীর বাঁধসংলগ্ন ফুলগাজী উপজেলার বাসিন্দা ওবায়দুল হক বলেন, ‘আমার বয়স সত্তরের ওপরে। আমার মনে পড়ে না, কখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা এসে বাঁধ দেখে গেছেন। শুধু বাঁধ ভেঙে বন্যা হলে পাউবোর কর্মকর্তারা এসে হাঁকডাক ছাড়েন।’

পরশুরাম উপজেলার বাসিন্দা জাহান আরা ফেরদৌস বলে, প্রতিবছর বাঁধের সংস্কারকাজ করলেও টেকসই হয় না। সংস্কারের পরও বাঁধের একই স্থান বারবার ভাঙছে। বাঁধ সংস্কারে দুর্নীতির কারণেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন ফেনী জেলা কমিটির সদস্য ইমন উল হক বলেন, সীমান্তবর্তী এই তিন নদীতে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে গ্রামবাসীকে বন্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। সেই বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড জড়িত। বন্যার আগে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ণয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা বন্যা–পরবর্তী বাঁধের সংস্কারকাজের গুণগত মান যাচাই করা বোর্ডের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। অথচ সেই দায়িত্ব তাঁরা পালন করছেন না।

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন বলেন, টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় বাঁধের কতগুলো স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জেলা প্রশাসনকে যেভাবে দেওয়া হয়, সেভাবে প্রশাসন তা গণমাধ্যমকে সরবরাহ করে। এবারের বন্যায় বাঁধের ২০টি স্থানে ভাঙন হয়েছে বলা হচ্ছে। অথচ হঠাৎ করে ভাঙনের সংখ্যা ৩৬ হয়ে গেল। এর কারণ একমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডই ভালো বলতে পারবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত র কর ত র নদ র ব বন য য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস

জমকালো সাজে সেজেছে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল। উপলক্ষটাও অনন্য, রাজকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে এখানে রাজকীয় নৈশ্যভোজ আয়োজন করেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।

বুধবার রাতের রাজকীয় এ আয়োজনে কূটনীতি, খাবার, ঐতিহ্য, সংগীত আর আভিজাত্য একসুতোয় বাঁধা পড়েছিল। ট্রাম্প–মেলানিয়াসহ রাজার অতিথি হয়েছিলেন বিশ্বের ১৬০ জন গণমান্য ব্যক্তি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মানে রাজা তৃতীয় চার্লসের আয়োজন করা রাজকীয় ভোজের টেবিল। যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ