রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে একটি বালুবাহী বড় বাল্কহেড ডুবে গেছে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান সুকানিসহ পাঁচজন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ওই বাল্কহেডের পেছনের অংশ পানির ওপরে থাকায় ফেরিসহ নৌযান চলাচলে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোমবার সন্ধ্যার দিকে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ফেরিঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভাটিতে বাহিরচর এলাকায় বাল্কহেডটি ডুবতে থাকে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, বাল্কহেডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জেগে থাকায় ফেরিসহ নৌযান চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ রাতেই ঘটনাস্থলে বয়া স্থাপন করেছে। ফেরিমাস্টারদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বালুর মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুর থেকে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ঘনফুট বালু বোঝাই করে ‘শেখ হাজী হান্নান’ নামের বাল্কহেডটি দৌলতদিয়া ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রবল স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডুবোচরের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করে। খবর পেয়ে ট্রলারযোগে সুকানিসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটের অদূরে বাহিরচরের ছাত্তার মেম্বারপাড়ার কাছে বাল্কহেডটির অনেকাংশ জেগে আছে। ফলে ফেরিসহ নৌযানগুলোকে বিকল্প পথে ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।

সুকানি সেলিম মিয়া বলেন, ‘বাল্কহেডটির ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার ঘনফুট। প্রবল স্রোতের কারণে ইঞ্জিনের শক্তি কুলাতে না পেরে ভাটির দিকে সরাতে থাকি। একপর্যায়ে ডুবোচরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাল্কহেডটি কাত হয়ে ডুবে যায়। দ্রুত উদ্ধার না হলে আমরা প্রাণ হারাতাম।’

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নদীতে চলাচলকারী অনেক বাল্কহেডের নিবন্ধন ও ফিটনেস নেই। অদক্ষ সুকানিদের দিয়ে এসব বাল্কহেড চালানো হয়। আবার ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বালু পরিবহন করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ত্রিনাথ সাহা বলেন, পদ্মায় চলাচলকারী বাল্কহেডের বিরুদ্ধে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২টি অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে স্রোত তীব্র থাকায় তদারকি কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বাল্কহেড ডোবার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ডুবে যাওয়া বাল্কহেড দ্রুত অপসারণ বা স্থানান্তরের জন্য মালিককে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ লতদ য়

এছাড়াও পড়ুন:

সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদের তীরের ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর আদালতে মামলাটি করেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম হোসেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা মামলাটি দায়ের ও আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রতারগাঁও মৌজায় ধোপাজান নদের তীরে তাঁর পরিবারের ২ একর ৪০ শতক ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা চলমান। কিন্তু লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং ধোপাজান নদে বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি নিয়ে তাঁর জমি থেকে জোরপূর্বক নদের পাড় কেটে ও ফসলি জমি নষ্ট করে বালু উত্তোলন করেছে।

বাদীর অভিযোগ, ২৭ অক্টোবর রাতে তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লিমপিডের লোকজনকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখেন। বাধা দিলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, আসামিপক্ষ তাঁর জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করেছে। এতে তাঁর জমির একাংশ নদে বিলীন হয়ে গেছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত ধোপাজান নদ। ভারত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা এই নদের ইজারা ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। ড্রেজার দিয়ে অবাধ বালু উত্তোলনের ফলে এলাকায় ব্যাপক ভাঙন ও পরিবেশগত ক্ষতি হওয়ায় সরকার ওই সময় ইজারা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। নদটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন।

ইজারা বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এই নদে প্রকাশ্যে বালু লুট শুরু হয়। প্রায় আড়াই মাসে এখান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনো ধোপাজান নদ থেকে নানাভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এর মধ্যেই গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের প্রতিষ্ঠানটিকে ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চলমান কাজে এ বালু ব্যবহার করা হবে। তবে ধোপাজান নদ বিআইডব্লিউটিএর আওতাভুক্ত নয়। এরপর আগস্টে জেলা প্রশাসন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ধোপাজান নদে বিটি বালু নেই, এখানে রয়েছে উন্নতমানের সিলিকা বালু। এ বালু উত্তোলনের অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এবং অনুমোদনপ্রক্রিয়াটিও বিধিসম্মত হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর পর থেকেই লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বালু উত্তোলনের বিরোধিতা করে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত বুধবার একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

নদের তীরের মুসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার বলেন, নানাভাবে এই বালু তোলা বন্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে, কিন্তু ফল হচ্ছে না। এর সঙ্গে বড় বালুখেকোরা জড়িত। তাঁরা স্থানীয় প্রভাবশালীসহ সুবিধাভোগীদের ম্যানেজ করে বালু তুলে বিক্রি করছেন। এই বালু লুট বন্ধ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডুবচরে আটকা পড়া ‘বোগদাদিয়া ৭’ এর যাত্রীরা নিরাপদে
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা
  • সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা