পদ্মায় বালুবাহী বাল্কহেড ডুবে ঝুঁকিতে নৌযান চলাচল
Published: 19th, August 2025 GMT
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে একটি বালুবাহী বড় বাল্কহেড ডুবে গেছে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান সুকানিসহ পাঁচজন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ওই বাল্কহেডের পেছনের অংশ পানির ওপরে থাকায় ফেরিসহ নৌযান চলাচলে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোমবার সন্ধ্যার দিকে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ফেরিঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভাটিতে বাহিরচর এলাকায় বাল্কহেডটি ডুবতে থাকে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, বাল্কহেডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জেগে থাকায় ফেরিসহ নৌযান চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ রাতেই ঘটনাস্থলে বয়া স্থাপন করেছে। ফেরিমাস্টারদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বালুর মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুর থেকে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ঘনফুট বালু বোঝাই করে ‘শেখ হাজী হান্নান’ নামের বাল্কহেডটি দৌলতদিয়া ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রবল স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডুবোচরের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করে। খবর পেয়ে ট্রলারযোগে সুকানিসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাটের অদূরে বাহিরচরের ছাত্তার মেম্বারপাড়ার কাছে বাল্কহেডটির অনেকাংশ জেগে আছে। ফলে ফেরিসহ নৌযানগুলোকে বিকল্প পথে ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।
সুকানি সেলিম মিয়া বলেন, ‘বাল্কহেডটির ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার ঘনফুট। প্রবল স্রোতের কারণে ইঞ্জিনের শক্তি কুলাতে না পেরে ভাটির দিকে সরাতে থাকি। একপর্যায়ে ডুবোচরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাল্কহেডটি কাত হয়ে ডুবে যায়। দ্রুত উদ্ধার না হলে আমরা প্রাণ হারাতাম।’
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নদীতে চলাচলকারী অনেক বাল্কহেডের নিবন্ধন ও ফিটনেস নেই। অদক্ষ সুকানিদের দিয়ে এসব বাল্কহেড চালানো হয়। আবার ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বালু পরিবহন করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ত্রিনাথ সাহা বলেন, পদ্মায় চলাচলকারী বাল্কহেডের বিরুদ্ধে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২টি অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে স্রোত তীব্র থাকায় তদারকি কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বাল্কহেড ডোবার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ডুবে যাওয়া বাল্কহেড দ্রুত অপসারণ বা স্থানান্তরের জন্য মালিককে বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ লতদ য়
এছাড়াও পড়ুন:
দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত
তীব্র স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনের কবজা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে দৌলতদিয়ায় শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু আছে। এতে যানবাহন পারাপারে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় ও ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর এর তীব্রতা আরও বাড়ে। রাত ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় ফেরিটি প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দিলে কবজা ভেঙে যায়। এর পর থেকে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর আগে ২৩ আগস্ট থেকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চারটি ঘাটের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন এবং জরুরি কিছু পণ্যবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।
দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্টে (৩ নম্বর ঘাট) দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির নিরাপত্তা পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, গতকাল রাতে ফেরি শাহ পরান ঘাটে ভেড়ার সময় প্রচণ্ড ধাক্কায় পন্টুনের কবজা ভেঙে যায়। তখন থেকে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে অনেক গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও লম্বা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় চালকসহ যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সৌহার্দ্য পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে পার হতে পারছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী গাড়ি আটকে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। আমাদের চারটি যাত্রীবাহী বাস চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছে। বাসগুলো ফেরিতে উঠতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগছে।’
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে অনেক বেশি সময় লাগছে। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও কিছু জরুরি গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি আপাতত পার করা যাচ্ছে না।