বনের জমি উদ্ধারে অগ্রগতি, দূষণ ও পলিথিন বন্ধ হয়নি
Published: 19th, August 2025 GMT
নদী ও বায়ুদূষণ রোধে কর্মপরিকল্পনা হলেও সার্বিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে বনের জমি উদ্ধারে সাফল্য রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দেওয়া বরাদ্দ বাতিল করে প্রায় ১০ হাজার একর বনভূমি ফিরিয়ে এনেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ সময়ে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
কক্সবাজারের বনাঞ্চলে স্বস্তি ফিরলেও বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে মহাবিপন্ন হাতি মারা গেছে ১৯টি। এর মধ্যে হাতি সংরক্ষণে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে যেকোনো একটি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে নদীর সংখ্যা নিয়ে নদী রক্ষা কমিশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যকার বিভ্রান্তি দূর হয়েছে। দুই সংস্থা যৌথভাবে নদীর একটি অভিন্ন তালিকা করেছে, যেখানে নদ–নদীর সংখ্যা পাওয়া গেছে ১ হাজার ২৯৪টি।
শব্দদূষণ বন্ধে শাহজালাল বিমানবন্দর ও সচিবালয় এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা সত্ত্বেও নীরব এলাকায় শব্দদূষণ বন্ধ হয়নি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার নদীগুলোতে এত বছরে যে পরিমাণ দূষণ আমরা করেছি, এখন এক–দেড় বছরে কোনো কূলকিনারা পাব না। তবে ঢাকার ৪টি ও ঢাকার বাইরের ১৬টি নদীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছি। দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণকারীদের তালিকাও করেছি।’
শব্দদূষণের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা করছি, সেখানে ট্রাফিক সার্জেন্টের ক্ষমতা দিচ্ছি। বিদ্যমান আইনে হর্ন বাজালে সার্জেন্টরা জরিমানা করতে পারেন না। নতুন বিধিমালায় সেটা তাঁরা পারবেন। তবে মানুষের দীর্ঘদিনের হর্ন বাজানোর অভ্যাসে পরিবর্তন না আনলে শব্দদূষণ বন্ধ করা যাবে না।’
আমরা বনের দখলগুলোকে চার ভাগে ভাগ করেছি—শিল্পকারখানা, রিসোর্ট, কৃষি ও হাটবাজার। গাজীপুরে শিল্পকারখানার দখল থেকে বনভূমি উদ্ধার করা বেশ কঠিন। কারণ, অনেক শিল্পকারখানা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মামলা করে রেখেছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দখলমুক্ত করা যায় না। অন্য তিন ক্যাটাগরির দখল আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ করে যাচ্ছিবন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো.আমীর হোসাইন চৌধুরীভূমির বরাদ্দ বাতিল
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প’–এর চাপ পড়ে কক্সাবাজারের বনভূমির ওপর। কক্সবাজারের রামুতে ফুটবল একাডেমি নির্মাণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ২০ একর সংরক্ষিত বন, জনপ্রশাসনের লোকপ্রশাসন একাডেমি নির্মাণে শুকনাছড়িতে ৭০০ একর বন ও সোনাদিয়ায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে ৯ হাজার ৪৬৭ একর বনভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয় বিগত সরকারের আমলে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের ভাইয়ের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১৫৫ একর বনভূমি। গত এক বছরে এসব বরাদ্দ বাতিল করে বন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়।
সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সিলেটে নিজের এলাকা লাঠিটিলার সংরক্ষিত বনের ভেতরে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাফারি পার্ক করতে চেয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার তা বাতিল করেছে।
বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ১০০ একরের মতো বনভূমি। নিষিদ্ধ করা হয়েছে আগ্রাসী প্রজাতির আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসগাছ। রাজশাহীর বিল জোয়ানা এবং বিল ভেলাকে জলাভূমিনির্ভর অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশের ২৪টি জেলায় দখল হয়ে যাওয়া বনভূমির পরিমাণ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর। আর দখলদারের সংখ্যা ৮৮ হাজার ২১২। গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে এখনো প্রভাবশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। ৫ আগস্টের পর গাজীপুরে ১০০ একরের মতো বনভূমি দখল হয়ে গেছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৭০ একর।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বনের দখলগুলোকে চার ভাগে ভাগ করেছি—শিল্পকারখানা, রিসোর্ট, কৃষি ও হাটবাজার। গাজীপুরে শিল্পকারখানার দখল থেকে বনভূমি উদ্ধার করা বেশ কঠিন। কারণ, অনেক শিল্পকারখানা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মামলা করে রেখেছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দখলমুক্ত করা যায় না। অন্য তিন ক্যাটাগরির দখল আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ করে যাচ্ছি।’
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে কক্সবাজারে বনের জায়গা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে বরাদ্দ নিতে পারেনি। বরং বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে দেওয়া বনের জায়গার বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। বাঁকখালী নদীর দখলও বন্ধ হয়েছে। তবে পাহাড় কাটা কিছুটা কমলেও এখনো গোপনে চলছে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রাকৃতিক শালবন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। টাঙ্গাইল বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মহসিন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাকৃতিক শালবন পুনরুদ্ধারে একটা মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ৭৫০ একর শাল ও শাল সহযোগী প্রজাতি যেমন হরীতকী, বহেড়া, হলুদ ও চাপালিশ রোপণ করা হয়েছে। পরে আরও ১ হাজার ১০০ একর শালবন করা হবে।
পলিথিন বন্ধ করতে হলে উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিং ও সচেতনতা তৈরি—এই তিনটা একসঙ্গে করতে হবে। সেটাই আমরা করে যেতে চেষ্টা করছি। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগসেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে পর্যটকদের আগমন। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয়দের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে সাত কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এ দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য।
অন্তর্বর্তী সরকার সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারবেন, তবে রাত যাপন না করে দিনেই ফিরে আসতে হবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—এই দুই মাস পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে পর্যটকের সংখ্যা দৈনিক দুই হাজার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ থাকবে।
পলিথিন ও বায়ুদূষণ বন্ধে চ্যালেঞ্জউপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর দ দ ব ত ল প রথম আল ক পর যটক র ব ত ল কর র বনভ ম প রকল প সরক র র ন র দখল এক বছর একর বন ক ত কর বন র জ স রক ষ পল থ ন পর ব শ মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি
২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।
তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।
আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।
কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন