ভারতে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট বেছে নিল সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডিকে। ৭৯ বছর বয়সী এই প্রবীণ আইনজ্ঞের সঙ্গে এবার মোকাবিলা হবে শাসক এনডিএ জোটের রাজনৈতিক প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর।

দুই জোটের প্রার্থী বাছাইয়ের পর এখন এটা স্পষ্ট, লড়াই হতে চলেছে তামিলনাড়ুর সঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশের। রাধাকৃষ্ণন যেমন তামিলনাড়ুর, সুদর্শন রেড্ডি তেমন অন্ধ্র প্রদেশের। রাধাকৃষ্ণনকে প্রার্থী বাছাই করে বিজেপি যদি তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকেকে ‘ধর্ম সংকটে’ ফেলে থাকে, তাহলে সুদর্শন রেড্ডিকে প্রার্থী করে বিরোধীরাও চাপে ফেলতে চাইছে অন্ধ্র প্রদেশের শাসক দল টিডিপিকে। দুই জোটই ভূমিপুত্র রাজনীতি খেলতে চাইছে।

সিপি রাধাকৃষ্ণন এখন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। কৈশোর বয়স থেকেই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত। সংঘের আদর্শে দীক্ষিত। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন, লোকসভা সদস্যও হয়েছিলেন দুবার। তুলনায় বি সুদর্শন রেড্ডি অরাজনৈতিক। অন্ধ্র প্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন তিনি। পরে গুয়াহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। শেষে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।

রেড্ডিকে প্রার্থী ঘোষণা করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আজ মঙ্গলবার বলেন, রেড্ডি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের একনিষ্ঠ সাহসী সমর্থক। বিভিন্ন মামলায় দেওয়া তাঁর রায় পড়লে বোঝা যাবে, কীভাবে তিনি দরিদ্র মানুষের পক্ষে থেকেছেন। সংবিধান ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করেছেন।

সুদর্শন রেড্ডি ‘অরাজনৈতিক’ হলেও খাড়গে জানিয়েছেন, উপরাষ্ট্রপতি পদের লড়াইটা হতে চলেছে দুই বিচারধারার মধ্যে। দুই আদর্শের যুদ্ধ।

রাধাকৃষ্ণনকে প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে বিজেপির রাজনীতি খুবই স্পষ্ট। তামিলনাড়ুকে তারা কতটা প্রাধান্য দিচ্ছে, তার একটা প্রচার তারা এর মধ্য দিয়ে করতে চাইছে। আগামী বছর তামিলনাড়ু বিধানসভার ভোট। সেখানে ক্ষমতায় আসার তাগিদও প্রার্থী বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট। তা ছাড়া তামিল কার্ড খেলে তারা চাইছে ডিএমকের মধ্যে ভাঙন ধরাতে।

সেই রাজনীতি, তাগিদ ও প্রচার ভোঁতা করে দিতে চেয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি যেমন তামিল জাত্যাভিমানকে হাতিয়ার করতে চেয়েছে, ইন্ডিয়া জোটও তেমন হাতিয়ার করতে চাইছে অন্ধ্র প্রদেশের জাত্যাভিমান। রাজীব গান্ধীর হত্যার পর কংগ্রেস পি ভি নরসিংহ রাওকে প্রধানমন্ত্রী করেছিল। অথচ সেবার সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেননি।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অন্ধ্র প্রদেশের নান্দিয়াল কেন্দ্র থেকে নরসিংহকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিল। অন্ধ্র জাত্যাভিমানের স্বার্থে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি। ভূমিপুত্র নরসিংহ রাও রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।

রাধাকৃষ্ণনকে প্রার্থী করে বিজেপি তামিল জাত্যাভিমান এবং সুদর্শন রেড্ডিকে প্রার্থী করে বিরোধীরা অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানার জাত্যাভিমানের পরীক্ষায় নেমেছে। অন্ধ্র প্রদেশের টিডিপি ও তেলেঙ্গানার ওয়াইএসআর কংগ্রেস ও বিআরএসে বিরোধীরা ভাঙন ধরাতে পারে কি না, সেটা যেমন পরীক্ষা, তেমনি দেখার ডিএমকের সমর্থন বিজেপি প্রার্থী রাধাকৃষ্ণন পান কি না।

ডিএমকের ভাঙন ঠেকাতে বিরোধী জোট প্রথমে ভেবেছিল তারাও তামিলনাড়ু থেকে কাউকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেবে। সেই লড়াইয়ে নামতে আপত্তি জানায় তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের দাবি ছিল, দুই তামিল প্রার্থীর মধ্যে লড়াই বাধানোটা ঠিক রাজনীতি হবে না। তারা চাইছিল এমন কাউকে বাছা হোক, যিনি রাজনীতির লোক নন।

রাজনীতির বাইরে অথচ তামিল হিসেবে ডিএমকে চাইছিল ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী এম আন্নাদুরাইকে প্রার্থী করতে। কোনো কোনো মহল মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র তুষার গান্ধীর নাম প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পছন্দ করা হয় সুদর্শন রেড্ডিকে। ফলে লড়াইটা হয়ে দাঁড়াল তামিল বনাম অন্ধ্র জাত্যাভিমানের। যদিও ইন্ডিয়া জোটের দাবি, লড়াইটা বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক’ নীতির বিরুদ্ধে বিরোধীদের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধান রক্ষার’।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপর ষ ট রপত র জন ত ক ব চ রপত ড এমক

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক

ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।

সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ