জুলাই সনদের খসড়ায় থাকা অসংগতি সংশোধন হলে বিএনপি মতামত দেবে: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 19th, August 2025 GMT
জুলাই সনদের খসড়ায় কিছু অসংগতি আছে এবং এসব সংশোধন করার পরই বিএনপি তাদের চূড়ান্ত মতামত দেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বিএনপি জুলাই সনদের প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজা হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্যের অনেক বিষয় অধ্যাদেশ জারি বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সরকার প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন আইনকে অধ্যাদেশ আকারে বাস্তবায়ন করছে। আবার অনেক বিষয় এমনও আছে, যেগুলোর জন্য নির্বাহী আদেশ পর্যন্ত প্রয়োজন নেই। এগুলো চিহ্নিত করেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাঁর মতে, শুধু যেসব ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন, সেগুলোই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সংসদে নেওয়া উচিত।
জুলাই সনদের একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যাসংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে। এ প্রস্তাবের সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, এটি যুক্তিযুক্ত নয়। তিনি যুক্তি দেন, আপিল বিভাগ সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনতে পারে। কিন্তু একটি সমঝোতা দলিলকে ব্যাখ্যা করা বা তার বৈধতা নির্ধারণ করা আদালতের এখতিয়ারে পড়ে না।
জুলাই সনদের ব্যাখ্যা আপিল বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা হলে অনেক জটিলতাও তৈরি হবে বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের ব্যাখ্যার দায়িত্ব আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এটি কিসের ভিত্তিতে যাবে? সেটা কে নিয়ে যাবে? এটি ঠিক করতে হবে।’
বিএনপি জুলাই সনদের সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে বলে জানান সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এ সনদ প্রণীত হচ্ছে। তাই যেসব বিষয় নিয়ে সবার মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে বিএনপি কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। বিএনপি চায় সমঝোতার মধ্য দিয়ে, আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হোক, স্বাক্ষরিত হোক এবং বাস্তবায়িত হোক।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেটা আমরা যখন বলার তখন বলব।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো সংশয় নেই। যাঁরা বলছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না, তাঁরা আসলে বিভিন্ন পক্ষকে চাপে রাখার জন্য বলছেন।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে।
সালাহউদ্দিনের মতে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংসদকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সংবিধান সংশোধন কিংবা বড় কোনো সিদ্ধান্ত সংসদ ছাড়া গ্রহণ করা যায় না। তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে সবার ঐকমত্য আছে, সেগুলো সংসদে আনলেই বৈধতা পাবে।
সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন নোট অব ডিসেন্ট প্রসঙ্গেও কথা বলেন। তিনি জানান, শুধু বিএনপিই নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছে। নারী আসন নিয়ে বিএনপির প্রস্তাব ছিল ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৫ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া, যেখানে তাঁরা সরাসরি ভোটের নির্বাচনে অংশে নেবেন। কিন্তু অন্য দলগুলো এ প্রস্তাবে দ্বিমত করেছে। এ ছাড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০-এর সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপি চারটি ক্ষেত্র যুক্ত করতে চেয়েছে, যা নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র স ল হউদ দ ন আপ ল ব ভ গ প রস ত ব ব এনপ র ঐকমত য
এছাড়াও পড়ুন:
কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, আন্দোলনরত বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দাবিগুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত আর কোনো ধরনের আন্দোলনে না নামার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দুই পক্ষ।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষসহ মোট ৬০ জন অংশ নেন।
উপদেষ্টা জানান, প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের দাবিগুলো যাচাই করে সুপারিশ দিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুই পক্ষের দাবিগুলো খানিকটা পরস্পরবিরোধী। একজনের দাবি মেনে নিলে আরেকজন অসন্তুষ্ট হবেন। তাই, কীভাবে উভয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা যায়, সেটাই মূল লক্ষ্য। নিজেদের থেকে নয়, বরং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, কমিটি কাজ করবে—কীভাবে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করা যায়। অনেকটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতো। ওনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, কমিটির সুপারিশ না আসা পর্যন্ত কোনো ধরনের আন্দোলন বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচিতে তারা যাবেন না।
ঢাকা/এএএম/রফিক