ডাকসু নির্বাচনে লড়ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯ শিক্ষার্থী
Published: 25th, August 2025 GMT
আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯ মেধাবী শিক্ষার্থী।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও যাছাই-বাছায়ে টিকেছেন। রাইজিংবিডিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর সভাপতি মাসুদ রানা।
আরো পড়ুন:
আইন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
চবিতে বাগছাসের নেতৃত্বে মুনতাসির-মাশনুন
তিনি জানান, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট এই তিনটি উপজেলার নয়জন বাসিন্দা বিভিন্ন পদে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থী হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে সদস্য প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন একজন। এছাড়া ডাকসুর হল সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদপ্রার্থী রয়েছেন দুইজন, জিএস পদপ্রার্থী একজন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে একজন, ক্রীড়া সম্পাদক (অভ্যন্তরীণ) পদে একজন, কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী তিনজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে সদস্য পদপ্রার্থী হয়েছেন মো.
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ভিপি পদপ্রার্থী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা এলাকার আসিফ রায়হান, তিনি ২০১৮-১৯ সেশনের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। শামসুন্নাহার হলের ভিপি পদপ্রার্থী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার বাসিন্দা কুররাতুল আইন কানিজ, তিনি ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী। বিজয় একাত্তর হলের জিএস পদপ্রার্থী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা আসিক বিল্লাহ, তিনি ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।
হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলের সমাজসেবা সম্পাদক পদে লড়ছেন সারোয়ার জাহান, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার রাজারামপুরের বাসিন্দা ও ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ক্রীড়া সম্পাদক (অভ্যন্তরীণ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা ও ২০২০-২১ সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী তাজকিরুল ইসলাম।
এছাড়া বিজয় একাত্তর হলের কার্যনির্বাহী পদে শিবগঞ্জের বাসিন্দা ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সজিব খাঁন, কবি সুফিয়া কামাল হলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার রাজারামপুরের বাসিন্দা ও ২০২৩-২৪ সেশনের মৎসবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা সামিহা মায়িশা ও শিবগঞ্জের বাসিন্দা মোসা. সুরাইয়া খাতুন শামসুন্নাহার হলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা দাবি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কিংবা নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলন প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। ডাকসুকে তার এসব ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
প্রায় ৬ বছর পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। এমন এক সময়ে এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যখন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে।
হাজী মুহম্মদ মুহসিন হলের সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী সারোয়ার জাহান বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ডাকসু নির্বাচন পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। প্রার্থীদের উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা দেখে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার যে ধারা চালু হয়েছে, সেটা সহজেই অনুমেয়। আমার একই পদে ছয়জন প্রতিদ্বন্দিতা করছি। জয়লাভের বিষয়ে সবটুকু আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করছি। জয় যারই হোক, ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা যেন অব্যহত থাকে।”
ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়জন শিক্ষার্থী প্রার্থী হওয়াটা আমাদের জেলার জন্য গর্ব ও আনন্দের বিষয়। দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এ নির্বাচনে আমাদের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা, মেধা ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থার প্রতিফলন। তাদের এ পদচারণা ভবিষ্যতের জাতীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। আমি প্রত্যাশা করি তারা জেলার সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
তিনি আরো বলেন, “২০১৯ সালের পর দীর্ঘ ৬ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রথমবারের মত ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। নতুন প্রজন্মের ভোটাররা আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত। আশা করি, এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা জাগ্রত করবে এবং সুষ্ঠু ও প্রাণবন্ত নির্বাচন হবে।”
ঢাকা/মেহেদী/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ সদর প ইনব বগঞ জ র পদপ র র থ সদস য পদ হল র ক র সদস য প উপজ ল র শ বগঞ জ র হল র লড়ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ