মানিকগঞ্জ জেলায় দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসের এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৫৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪০৯ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪০ জন। ইতোমধ্যে ৯৩ শতাংশেরও বেশি রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। 

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আটজন এবং বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন পাঁচজন।

আরো পড়ুন:

ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত যুবক সড়কে পড়েছিল, হাসপাতালে মৃত্যু

‘তাবু আর হাসপাতালগুলো এখন ট্র্যাজেডির মঞ্চ’ 

বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মোট ৩৬ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৫১৩ জন রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন। মশাবাহিত এই রোগে জেলায় কোনো মৃত্যু নেই।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় দুইজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে ১৬৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ১৫৫ জন সুস্থ হয়েছেন।  

ঘিওর উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে একজনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ জন। ৪৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন একজন।

সাটুরিয়া উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে একজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চলতি বছরে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ জন। এর মধ্যে ৪৪ জন সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসাধীন আছেন ছয়জন।

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন চারজন রোগী। এ নিয়ে হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছেন ৯ জন। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এখানে মোট ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩৪ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন।

মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে পাঁচ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ হাসপাতালে মোট ১৪০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন এবং বর্তমানে সাতজন চিকিৎসাধীন। সিংগাইর, হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুরে কোনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ মানিকগঞ্জের সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, ‍“মানিকগঞ্জে ডেঙ্গুর বিস্তার ধীরে ধীরে বাড়লেও মৃত্যুহার এখনো শূন্য রাখা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এখনই সচেতনতা বাড়ানো ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা.

মো. খুরশীদ আলম বলেন, “ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের কারণে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। জনগণকে সচেতন না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।” তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা, বাড়ির আঙিনায় জমে থাকা পানি অপসারণ এবং মশারি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স স থ হয় ছ ন ম ন কগঞ জ ত হয় ছ ন জন ড ঙ গ জন র গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে