ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ ঘিরে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ পরিষদের এজিএস প্রার্থী অদিতি ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই সিদ্ধান্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেন।

আরো পড়ুন:

হত্যাচেষ্টার মামলায় ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী জালাল গ্রেপ্তার

ঢাবি হল সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী ১০৩৫ জন

অদিতি লিখেছেন, “প্রশাসন বলছে প্রবেশমুখের সাতটি পয়েন্টে সেনারা থাকবে ‘স্ট্রাইকিং পজিশনে’। প্রশ্ন হচ্ছে, কাকে আঘাত করার জন্য এই অবস্থান? এ সিদ্ধান্ত নির্বাচনী পরিবেশকে শঙ্কিত করবে এবং ভোটারদের, বিশেষ করে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে।”

তিনি করেন, “অতীতে সেনা বা আধাসামরিক বাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা আছে। ২০০৭ সালের আগস্টে জগন্নাথ হলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার পর আন্দোলনের মুখে সেনাদের ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছিল। সম্প্রতি কনসার্টে ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং গত ১৭ জুলাই বিজিবি প্রবেশ করিয়ে টিয়ারশেল-গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছিল।”

তিনি আরো বলেন, “সেনা মোতায়েনের ফলে প্রশাসনের নিরাপত্তাহীনতার বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট হচ্ছে। নির্বাচনের দিন নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রয়োজনে নিজস্ব জনবল বাড়ানো, নির্বাচন কমিশনের সহায়তা নেওয়া কিংবা পুলিশ মোতায়েন করা যেতে পারে। কিন্তু সেনা মোতায়েন কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।”

তিনি অবিলম্বে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব দক্ষ জনবল দিয়েই নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

এদিকে অদিতির দেওয়া ফেসবুক পোস্টটি ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ পরিষদের জিএস প্রার্থী এনামুল হাসান অনয়ও শেয়ার করে ইংরেজিতে লিখেছেন ‘দ্য উইন্ড অব অগাস্ট স্টিল ব্লোয়িং!!!’

এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ভিপি, জিএস ও এজিএস প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করে নির্বাচনী আচরণবিধি মান্যতা ও সার্বিক পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এস প র র থ

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই