অবৈধ সম্পদ অর্জন: স্ত্রী-ছেলেসহ সাবেক খাদ্যমন্ত্রী রাজ্জাককে
Published: 27th, August 2025 GMT
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার বানু ও ছেলে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনুসন্ধানে আব্দুর রাজ্জাকের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৪ টাকা, শিরিন আক্তারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯০ লাখ ৭১ হাজার ৮৯০ টাকা এবং রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫১ লাখ ১২ হাজার ১০০ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। তাই, সম্পদের হিসাব দাখিল করতে তাদেরকে নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুদকের ডেপুটি ডিরেক্টর আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক জানায়, অনুসন্ধানে সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নামে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৯২ হাজার ৮৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। একই সময়ে তিনি ২ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ২০৪ টাকা ব্যয় করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ২৯০ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৬ টাকার। এক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৪ টাকা। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৪ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তার প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারার বিধানমতে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা যুক্তিসঙ্গত বলে দুদক জানায়।
আব্দুর রাজ্জাক ২০০২-২০০৩ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অন্যান্য প্রাপ্তি বাবদ প্রদর্শিত ১ কোটি ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩৫ টাকা প্রাপ্তি-সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র দাখিল করতে পারেননি। এছাড়া, জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত টাকা প্রাপ্তি-সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাই, তার উক্ত আয় গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে দুদকের কাছে।
সাবেকমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এ মন্ত্রণালয়কে ভাগ করে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নামে পৃথক দুটি মন্ত্রণালয় তৈরির পর তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৬ সালে আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর (সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি) সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া, তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত পর্যবেক্ষক সমন্বয় উপ-কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
দুদক জানায়, আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শিরিন আক্তার বানুর নামে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ৫১১ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। একই সময়ে তিনি ৫১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১ টাকা ব্যয় করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০২ টাকা। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬১২ টাকার। এক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৯০ লাখ ৭১ হাজার ৮৯০ টাকা। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯০ লাখ ৭১ হাজার ৮৯০ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। ফলে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারার বিধানমতে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
দুদক জানায়, শিরিন আক্তার ২০০৮-২০০৯ করবর্ষ থেকে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্নে অন্যান্য উৎস থেকে আয় বাবদ ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৮৮২ টাকা এবং সিকিউরিটি মুনাফা বাবদ ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯০ টাকা। ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৭২ টাকা-প্রাপ্তি সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র দাখিল করতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত টাকাপ্রাপ্তির বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের নামে ১ কোটি ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮২ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। একই সময়ে তিনি ৩ লাখ ১১ হাজার ১০১ টাকার পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ২৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৩ টাকা। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৭৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ টাকার। এক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৫১ কোটি ১২ হাজার ১০০ টাকা। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫১ লাখ ১২ হাজার ১০০ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তার প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারার বিধানমতে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা যুক্তিসঙ্গত বলে প্রতীয়মান হয় দুদকের কাছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ঞ ত আয়বহ র ভ ত ত র জ ঞ ত আয় গ রহণয গ য করবর ষ স থ বর কর ছ ন প র নন ৯০ ল খ মন ত র দমন ক
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না: বাম গণতান্ত্রিক জোট
গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে যে ‘মব’ সন্ত্রাসের শুরু হয়েছিল, সেটা এখনো চলছে এবং নগ্ন রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে এমন ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা। জোটের নেতারা বলেছেন, মব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাব এমন যে খারাপ কিছু তো করছে না।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এ কথা বলেন। মব সন্ত্রাস ও মাজার-খানকায় হামলা বন্ধসহ সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথাসময়ে নির্বাচনের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাম জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর যে মব শুরু হয়েছিল, সেই মব এখনো দূর হয়নি। বরং নগ্ন রূপ নিয়েছে।...তাহলে ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) তখন কী করলেন?’
সরকার না চাইলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না মন্তব্য করে রুহিন হোসেন বলেন, মব নিয়ে সরকারের উপদেষ্টারা আকারে-ইঙ্গিতে যা বলেন, তাতে ভাবটা এ রকম যে খারাপ কিছু করছে না। অন্তর্বর্তী সরকার এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারবে না।
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংস্কারের নামে শ্রমিক–কৃষক–মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করছেন না, কিন্তু সংবিধানের চার মূলনীতি পরিবর্তন করতে চান। অবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
‘মব’ সন্ত্রাস ও মাজার-খানকায় হামলা বন্ধসহ সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথাসময়ে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা–কর্মীরা। আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে