রাবি উপাচার্যকে পাকিস্তানে যেতে বললেন ছাত্রদল সভাপতি
Published: 27th, August 2025 GMT
লিখিত পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট সদস্য নির্বাচন ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ও রাকসু নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না হওয়ার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বিমুখ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছে সংগঠনটি। এবার রাবি ক্যাম্পাস ছেড়ে উপাচার্য ড.
আরো পড়ুন:
নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটেক ভবন ববি শিক্ষার্থীদের দখলে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম, শিক্ষা ব্যাহত
বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন। এই স্ট্যাটাসকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনাস-মালোচনার জন্ম দিয়েছে।
পোস্টে রাহী লিখেছেন, “ফকির-নকীব পাকিস্তান যাও, রাবি ছাড়ো, রাকসু বাঁচাও!”
তার পোস্টের প্রেক্ষিতে জাহিদ হাসান জোহা নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “কথায় কথায় যাকে-তাকে দেশের বাইরে পাঠানো ফ্যাদিবাদী আচরণ।” সালমান বিন আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন, “৫ আগস্টের পরে আপনাদের রাজনীতি হাসিনার মতোই হচ্ছে। জনগণের পারসেপশন বুঝতে আপনারা ব্যর্থ হচ্ছেন দিন দিন।”
হুজাইফা নামের একজন লিখেছেন, “শিক্ষকদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান অন্তত আশা করি এত বড় দলের কাছে। কথায় কথায় পাকিস্তান বলে নিজেদের লেজিটিমেসি নষ্ট কইরেন না।” বোরহান উদ্দিন লিখেছেন, “শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আমাদের সমালোচনা থাকবে অভিযোগ থাকবে। তাই বলে যা ইচ্ছে তাই বলা, তাদের ফকিন্নির বাচ্চা বলে গালি দেওয়া—এই বিষয়টা মনে হয় না কোনো ভদ্রলোকের কাজ হতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পাকিস্তানে পাঠানোর স্লোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “আমরা অতীতে দেখতাম ভারতীয় হাইকমিশন আগে সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করতো। ইনিও (ভিসি) দেখি পাকিস্তান হাইকমিশনার এলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, তারা একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিতও হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে কীভাবে ষড়যন্ত্র করা যায়, কীভাবে কাকে বাদ দেওয়া যায়, রাকসুতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো আগ্রহ তাদের নেই।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী, যারা রাকসু ফি প্রদান করেছে- এরকম হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ভোটদানে সুযোগ না দেওয়া মানে আমরা মনে করি গণতন্ত্রের উপর আঘাত। একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। আর বিশেষ গোষ্ঠী কারা, তা তো আপনারা জানেন। তাদের এসব কার্যকলাপের কারণেই মূলত রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে আমি ফেসবুকে ওই কথা লিখেছি।”
রাকসু নির্বাচনের আলাদা কমিশনার থাকা সত্ত্বেও কেনো বারবার উপাচার্যকেই দোষারোপ করছেন— এ প্রশ্নের উত্তরে রাহী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। একটি সংগঠনের কর্মী অন্যায় করলে যেমন নেতাকে দায়ভার নিতে হয়, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে নকীব স্যারকেও দায়ভার নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন কেউ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, অন্যায়ের শিকার না হয়, এগুলো নিশ্চিত করা তো তার দায়িত্ব।”
“তিনি সবকিছু ভঙ্গ করেছেন। আমরা তো তাকেই প্রশ্ন করব। রাকসুর এই পুনর্বিন্যস্ত ভোটের তারিখ প্রমাণ করে, তারা পাকিস্তানপন্থি। তারা কি জানতো না, এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা আছে। এমনিতেই তো রাকসু নির্বাচন নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। আমি দেখেছি, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি,” -যুক্ত করেন রাহী।
রাহী আরো বলেন, “প্রশাসন ধর্মকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে নির্বাচনের এই তারিখটা দিয়েছে। হিন্দু শিক্ষার্থীরা কি তাদের ধর্মীয় উৎসব ছেড়ে এই ভোট দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে থাকবে? আমরা চাই সবাই মিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আগামী ১ বছর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা ছাত্রদের অধিকারের আওয়াজ উঠবে। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো প্রশাসন মেনে নিলেই তো আমরা আর প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাই না। কিন্তু তারা তা করছে না।”
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ১৩ দিন পিছিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে ওইদিন দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী হওয়ায় সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তা পরিবর্তন করে ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে কমিশন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র জন ত ক উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে