শীর্ষে মুগ্ধ সবাই, বিনামূল্যে এনেছেন ১৭ কোটি টাকার ওষুধ
Published: 28th, August 2025 GMT
কেবল এমবিবিএস পাশ করেছেন, ইন্টার্নশিপ করছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। অথচ যে উদ্যোগ ও উদ্যম তিনি দেখিয়েছেন, তা স্বাভাবিকভাবে একজন ইন্টার্নের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শীর্ষ শ্রেয়ান নামের এই তরুণ চিকিৎসক দাতাসংস্থার সহায়তায় সংগ্রহ করেছেন স্ট্রোক ও হৃদরোগীদের জন্য ১৭ কোটি টাকার ওষুধ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিমত, ইন্টার্ন চিকিৎসক হয়েও উদ্যোগের দিক দিয়ে শীর্ষ সবার শীর্ষে। এই হাসপাতালের আর কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসক কখনও এটি করে দেখাতে পারেননি। ইন্টার্ন চিকিৎসক শীর্ষ শ্রেয়ানের গ্রামে বাড়ি ময়মনসিংহ। বাবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাই তার বেড়ে ওঠা সাভারে। শীর্ষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে। জুলাইয়ে এমবিবিএস শেষ করে এখন ইন্টার্নশিপ করছেন।
শীর্ষের কারণে রামেক হাসপাতাল গত সোমবার (২৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা থেকে আড়াই হাজার ভায়াল আল্টেপ্লেস পেয়েছে। আল্টেপ্লেস হলো একটি থ্রোমবোলাইটিক ওষুধ, যা সাধারণত স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ফলে রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত মুক্ত করতে ইনজেকশন আকারে ব্যবহার করা হয়। এটি রক্তের মধ্যে জমে থাকা থ্রম্বাস বা ব্লক দূর করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতেও সাহায্য করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আড়াই হাজার ভায়াল আল্টেপ্লেস বিনামূল্যেই পেয়েছে। দাম প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে শুধু একটি কোম্পানি এই ওষুধ বাজারজাত করে। ৫০ মিলিগ্রামের ইনজেকশন ও ইনফিউশনের প্রতি ভায়ালের দাম পড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। রোগীর ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে প্রয়োজন পড়ে দুই ভায়াল। স্ট্রোকের রোগীদের রক্ত জমাট বেঁধে গেলে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ও হৃদরোগীদের সাড়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি প্রয়োগ করতে হয়। দরিদ্র অনেক রোগীই দামি এই ওষুধ কিনে প্রয়োগ করতে পারেন না।
কীভাবে পাওয়া গেল
স্ট্রোক প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং তা নিয়ে গবেষণা করে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএসও)। এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শীর্ষ শ্রেয়ান তাদের একটি গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই গবেষণা প্রকল্পে শীর্ষ গবেষণা সহকারী ছিলেন। পরবর্তীতে গবেষণাপত্রটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে সেরা গবেষণা নির্বাচিত হয়।
এটি দেখে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ডিরেক্ট রিলিফ-এর এশিয়া প্যাশিফিক রিজিয়নের ডিরেক্টর গর্ডন উইলকক অস্ট্রেলিয়া থেকে গত মার্চে শীর্ষকে ই-মেইল করেন। জানান, তারা রামেক হাসপাতালকে আল্টেপ্লেস অনুদান দিতে চান। সেটি নেওয়া, সংরক্ষণ করা ও রোগীদের প্রয়োগের মতো সক্ষমতা এই হাসপাতালের আছে কি না।
ইন্টার্ন চিকিৎসক শীর্ষ তখন বিষয়টি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা.
অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদ আলাপকালে গর্ডন উইলকককে জানান, এই ওষুধ শুধু স্ট্রোকের রোগীদের জন্য দেওয়া হলে তাদের নিয়ে লাভ হবে না। কারণ, অধিকাংশ স্ট্রোকের রোগী সাড়ে ৪ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে আসেন। তাদের ক্ষেত্রে ওষুধটা ব্যবহার করা যাবে না। হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে সাড়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। যদি স্ট্রোক ও হৃদরোগী- উভয় রোগীদের ওষুধটি প্রয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তারা সেগুলো নেবেন। কয়েকদিন পর গর্ডন উইলকক এতে রাজি হয়ে ওষুধগুলো সরবরাহ করতে চান।
এরপর ডিরেক্ট রিলিফের সঙ্গে রামেক হাসপাতালের চুক্তি হয়। গর্ডন উইলকক প্রথমে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ই-মেইলে সেটি রামেক হাসপাতালে পাঠান। সেটি প্রিন্ট করে হাসপাতালের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ। এরপর আবার চুক্তিপত্রটি স্ক্যান করে গর্ডন উইলককের কাছে পাঠানো হয়।
জটিলতা দেখা দেয় বিমানবন্দরের শুল্কছাড় এবং ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ওষুধ আনা নিয়ে। ডা. আজিজুল হক আযাদ অনুরোধ করেন, সবকিছুই যেন করা হয় ডিরেক্ট রিলিফের পক্ষ থেকে। গর্ডন উইলকক তাতে সাড়া দেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই গত ২০ আগস্ট এই ওষুধ ঢাকায় আসে। এরপর একটি ফ্রোজেন ভ্যানে করে ২৫ আগস্ট ওষুধ আসে রাজশাহী। বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে বিনামূল্যে রোগীদের এই ইনজেকশন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
শীর্ষকে নিয়ে গর্বিত সবাই
রোগীদের জন্য শীর্ষ শ্রেয়ানের এমন ভূমিকাই অত্যন্ত খুশি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়সাল আলম বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত খুশি। এর আগে শিক্ষকেরা অনেক ফান্ড বাইরে থেকে এনেছেন, কিন্তু আমার জানামতে কোন শিক্ষার্থী পারেননি। এটা শীর্ষ করে দেখিয়েছেন। এটা অভাবনীয়। আমি তাঁকে নিয়ে গর্বিত। আমি আশা করব, এভাবেই যেন ছাত্ররা ভালো কাজে উৎসাহিত হয়। রোগীদের জন্য, মানুষের জন্য অবদান রাখে।’’
শীর্ষ শ্রেয়ানের মেন্টার অধ্যাপক আজিজুল হক আযাদ বলেন, ‘‘শীর্ষ যখন আমাকে বিষয়টা জানালো, তখন থেকেই আমিও বিষয়টা নিয়ে খুব উৎসাহিত ছিলাম। আমরা রোগীদের জন্য এটা করতে চেয়েছিলাম। এটা যে রোগীরা একেবারে বিনামূল্যে পাচ্ছেন। অথচ অনেক দামি বলে অনেকেই কিনতে পারেন না। তারপরও এই ওষুধটা একেবারেই অরিজিনাল। অনেক ভাল। আমরা সত্যিই শীর্ষকে নিয়ে গর্বিত। এটা অন্যদের উৎসাহিত করবে।’’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানালেন, বুধবার থেকেই এই ওষুধ রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। খবর নিয়ে জেনেছেন, বিকেল পর্যন্ত ৭০ ভায়াল ব্যবহার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই কৃতিত্ব শীর্ষর। সে অত্যন্ত মেধাবী।’’
ওষুধগুলো আনতে পেরে খুশি শীর্ষও। সময়মতো এই ওষুধ রোগীদের প্রয়োগ করতে চান তিনি। তাই স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে আসার তাগিদ দিলেন।
তিনি বলেন, ‘‘এখন ভালো লাগা কাজ করছে। সবচেয়ে ভাল লাগবে, যদি রোগীরা দ্রুত হাসপাতালে আসেন। কারণ, রোগীদের মাঝে দ্রুত হাসপাতালে আসার প্রবণতা কম। যদি কেউ দেখেন এক পাশের হাত-পা অবশ হয়ে গেছে, মুখ বেকে গেছে, চোখের পাতা পড়ে গেছে কিংবা কথা অস্পষ্ট হয়ে গেছে, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে আসুন।’’
ঢাকা/কেয়া/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ড ক ল কল জ র গ দ র জন য আল ট প ল স ব যবহ র হ দর গ আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক
রাগ করে কথা বন্ধ করেছিল প্রেমিকা। রাগ ভাঙিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে, একটু কথা বলতে ইউটিউব থেকে বোমা তৈরিত কৌশল শিখেছিল প্রেমিক। বোম ফাটার শব্দে যদি প্রেমিকা বেরিয়ে আসে... এই আশায়। এক্সপার্টের মতো বানিয়েও ফেলে বোমা। কিন্তু বোমা ফাটার তীব্র সেই শব্দে আতঙ্কিত হয়ে প্রেমিক ও তার বন্ধুরা পালিয়ে যায় নিজেরাই।
গত ২৮ অক্টোবর, ছট পূজার রাতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি এক আবাসিক এলাকা গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠে। বোমা মারার সেই ঘটনা দুষ্কৃতী আক্রমণ ভেবে লেগেছিল রাজনৈতিক রং, তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম। স্বাভাবিকভাবেই দুষ্কৃতীদের ধরতে চাপে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তদন্তে প্রেমিক প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর তথ্যে তদন্ত যেন মোড় নিয়েছে আশ্চর্যের এক প্রেমের গল্পে।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?
জঙ্গি সন্দেহে ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ‘মুফতি মাসুদ’
পুলিশ জানায়, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড মালিরবাগান খামারডাঙা এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা ছোঁড়া হয়। বাড়িটির দেয়ালে লাগে বোমা, জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়িটির বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কোনো সূত্র পাওয়া যায় না। এরপর এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি সিসিটিভির ফুটেজে একটি বাইকের ছবি দেখে তার সন্ধান শুরু করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিরবাগান এলাকায় যেখানে বোমাবাজি হয়েছিল সেখানে এক তরুণীর সঙ্গে চাঁপদানীর স্থানীয় যুবক সাগর মালিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমিক প্রেমিকার দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। এর মধ্যেই প্রেমিক বন্ধুদের মারফত জানতে পারে প্রেমিকা অন্য এক যুবকের সঙ্গে মেলামেশা করছে। এদিকে সাগরের ফোন ধরা বন্ধ করে দেয় তরুণী।
কী করে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করা যায় সেটাই ভাবতে থাকে প্রেমিক। এরপরেই বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা করার বুদ্ধি বের করে সাগর। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েক ধরনের পটকার উপদান দিয়ে বোমা বানায়। সেটি ফাটানোর পরিকল্পনা করা হয় প্রেমিকার বাড়ির পাশে।
বোমা ফাটার আওয়াজে তরুণী প্রেমিকা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে তার সঙ্গে কথা বলবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে ছট পূজার রাতে চার বন্ধু পৌঁছে যায় মালিরবাগান এলাকায়। বোমা ছোঁড়ে একটি বাড়ির দেওয়ালে। এতটাই জোরে শব্দ হয় যে তারা নিজেরাই ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে পুলিশ ওই তরুণীর সঙ্গে সাগরের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তার খোঁজ শুরু করে। পাশাপাশি বাইকের নম্বর দেখে খোঁজ শুরু করে। সাগর এবং তার বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, তারা ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে থাকছিল না। ঘটনার পর চার বন্ধুই কল্যাণীতে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গতকাল শুক্রবার পুলিশ তাদেরকে ব্যারাকপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক সাগর মালিক, প্রিন্স যাদব, প্রণীত পাল, আয়ুস যাদব, চারজনেরই বয়স ১৮-২০ বছর।ইতিমধ্যেই তাদের শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়েছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদ জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়েছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ