বাগেরহাটের সাইনবোর্ড-শরণখোলা-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ১৬ কিলোমিটার অংশের বেহাল দশা। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের কারণে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয়দের। সামান্য বৃষ্টিতে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ে কয়েকগুন। বিশেষ করে, গর্ত পানিতে ভরে থাকায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের গাড়ির চালক।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের আমড়াগাছিয়া কাঠেরপুল থেকে তাফালবাড়ী শাম বেপারীর বাড়ি ব্রিজ পর্যন্ত অংশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ভ্যান ও স্থানীয় পরিবহন যাতায়াত করে। সড়কটি মোট ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে ২৪ ফুট প্রশস্ত ১৯ কিলোমিটার, ১৮ ফুট প্রশস্ত ১৭ কিলোমিটার এবং ১২ ফুট প্রশস্ত ১৭ কিলোমিটার। সরু এবং ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচল অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
আরো পড়ুন:
তিন দফা দাবিতে চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
সড়ক সংস্কারের দাবিতে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভ
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন হাওলাদার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এ সড়কে চলাচল দুরূহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় খানাখন্দে পানি জমে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। দ্রুত এই সড়কটি প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।”
দূরপাল্লা বাসের চালক তাইজুল বলেন, “বড় বড় গর্তে গাড়ির চাকা আটকে যায়, সাইড দিতে গিয়ে গাছের ডালে বাসের ছাদ বেধে যায়। গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। এক কথায় এই সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।”
শরণখোলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন মিলন বলেন, “সুন্দরবনে দর্শনার্থীদের আগমনের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে এ সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করা জরুরি। তা না হলে, পর্যটকদের ভোগান্তি বাড়বে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।”
প্রবাসী জামাল নুর বলেন, “এটি নামে আঞ্চলিক মহাসড়ক, কাজে না। সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দ্রুত সংস্কার ও প্রশস্ত করার মাধ্যমে এলাকাবাসী দুর্ভোগ লাঘবে সকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।”
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুদিপ্ত কুমার সিংহ বলেন, “সড়কের বেহাল দশার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন প রশস ত সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস