পেটে গজ রেখে সেলাই, সাত মাস পর অপসারণ
Published: 28th, August 2025 GMT
ফেনীর আল-কেমী হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় রোগীর পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সাত মাস ব্যথা ও অসহনীয় কষ্টের পর বুধবার (২৭ আগস্ট) রাতে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারে বের করা হয় গজটি।
ভুক্তভোগীর নাম ফরিদা ইয়াসমিন (৪০)। তিনি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর এলাকার প্রবাসী মহিউদ্দিনের স্ত্রী।
আরো পড়ুন:
রোগীর সঙ্গে নার্সের টিকটক, অপারেশন থিয়েটার সিলগালা
এসআইয়ের ‘থাপ্পড়ে’ যুবদল নেতা হাসপাতালে
পরিবার জানায়, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ফেনী আল-কেমী হাসপাতালে ভর্তি হন ফরিদা ইয়াসমিন। সেদিন হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা.
বাড়ি ফেরার পর থেকেই ফরিদা ইয়াসমিন বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে থাকেন। ব্যথা কমছিল না বলে তিনি একাধিকবার ডা. তাসলিমা আকতারকে দেখান। তবে তিনি সবসময় এটিকে ‘সিজারিয়ান-জনিত ব্যথা’ উল্লেখ করে ব্যথানাশক ওষুধ দিতেন।
অবশেষে দীর্ঘদিনেও সুস্থ না হওয়ায় এক সপ্তাহ আগে ফরিদা ইয়াসমিন ফেনী জেড ইউ মডেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার পেটে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়ে। পরে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়।
বুধবার রাতে শহরের আল-বারাকা হাসপাতালে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আজিজ উল্ল্যাহ তার অস্ত্রোপচার করেন। এ সময় পেট থেকে প্রায় এক কেজি ওজনের এক ফুট লম্বা গজ বের করা হয়।
ভুক্তভোগীর ভাই মোহাম্মদ শাহ ফয়সাল বলেন, ‘‘এমন কাণ্ডে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যাবে। আমাদের অর্থনৈতিক বড় ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বড় কথা আমার বোন সাত মাস ভোগান্তিতে কাটিয়েছে। বোন অসুস্থ থাকায় তার স্বামীকেও প্রবাস থেকে দেশে ফিরতে হয়েছে। আমরা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। শিগগিরই মামলা করব। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ডা. তাসলিমা আকতারের মোবাইলে ব্যবহৃত নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ফেনী আল-কেমী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে আমরা অভ্যন্তরীণভাবে বসে আলোচনা করব। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের পর আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/শাহাব/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান