Risingbd:
2025-09-17@22:33:34 GMT

কাশ্মীরের অদম্য এক নারী শাসক

Published: 29th, August 2025 GMT

কাশ্মীরের অদম্য এক নারী শাসক

ভারতবর্ষের ইতিহাসে অদম্য একজন নারী শাসক রানি দিদ্দা। এই রানি তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বুদ্ধি, ক্ষমতা ধরে রাখার সক্ষমতা এবং নির্মমতার জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়েছেন। জানা যায়, মন্ত্রী কিংবা উচ্চপদস্থ কাউকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করলেই তাকে হত্যা করতেন। এমনকি আধিপত্য ধরে রাখতে একে একে হত্যা করেন নিজের তিন নাতিকেও। নির্মমতা, হত্যা চলানো এই রানির ছিলো একাধিক প্রেমিক। যার প্রেমে পড়তেন তাকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসতেন দিদ্দা। এক মহিষপালকের প্রেমে পড়ে তাকে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত করেন। কেমন ছিলো এই রানির শৈশব, বিবাহীত জীবন এবং শাসনকাল—সেসব নিয়েই সাজানো হয়েছে এই আর্টিকেল। 

শৈশবে বাবার প্রিয় হতে পারেননি রাজকন্যা দিদ্দা
দিদ্দা ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ শহরের দক্ষিণে পার্বত্য অঞ্চলের রাজা সিংহরাজের মেয়ে।  সে সময় ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশের চেয়ে কাশ্মীরের মেয়েরা বেশি স্বাধীন ছিলো।  কিন্তু দিদ্দার রাজকন্যা হয়েও অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত ছিলেন।  দিদ্দার কোনো ভাই ছিলো না, তারপরেও  দিদ্দাকে উত্তরাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছিলো। রাজতরঙ্গিনীর তথ্য অনুসারে দিদ্দা খোঁড়া ছিলেন। আর এই কারণেই নিজের কন্যাকে পছন্দ করতেন না রাজা সিংহরাজ।

আরো পড়ুন:

অল্প কয়েকটি উপকরণে তৈরি ‘মাছের ডিমের কালিয়া’

৫৫ বছর বয়সে ১৭ সন্তানের মা

রাজা ক্ষেমাগুপ্তের সাথে বিয়ে
পার্থগুপ্ত রাজবংশের রাজা ছিলেন ক্ষেমাগুপ্ত। ৯৫০ থেকে ৯৫৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেছেন। ক্ষেমাগুপ্ত ছিলেন বিলাসী তিনি মদ, নারী, জুয়া, শিকার আর হৈ-হুল্লোড়েই মেতে থাকতেন। ক্রমে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেন ক্ষেমাগুপ্ত। ক্ষমতা পোক্ত করতে তিনি রাজকন্যা দিদ্দাকে বিয়ে করেন। সিংহরাজ ছিলেন লোহারা রাজবংশের রাজা। অন্যদিকে দিদ্দার মা এসেছিলেন ওহিন্দের সম্ভ্রান্তশালী শাহী বংশ থেকে। আর তাই এই বিয়ে ক্ষেমাকে রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বাড়াতে সাহায্য করেছিল। ৯৫০ সালে ২৬ বছর বয়সে ক্ষেমাগুপ্তের সঙ্গে দিদ্দার বিয়ে হয় এবং কাশ্মীরের শ্রীনগরে আসেন রানি দিদ্দা। ইতিহাসবিদদের অনেকে মনে করেন দিদ্দাকে খোঁড়া বলার মাধ্যমে তার অক্ষমতা বা নৈতিকতার অভাবকে নির্দেশ করা হয়েছে। অনেকের মতে সত্যিকার অর্থেই তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে তিনি খোঁড়া ছিলেন বলেই অধিকাংশের মত। দিদ্দা নিজে খুঁড়িয়ে চলাফেরা করতে পারলেও তাকে সাহায্য করত ভালগা নামের এক নারী। 

বিয়ের পরেই শুরু আধিপত্য
দিদ্দা ক্ষেমাগুপ্তকে বিয়ে করার পরে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন।  সাধারণ মানুষও রাজা ক্ষেমাগুপ্তর নামের শুরুতে তার স্ত্রীর নাম যুক্ত করে সম্বোধন শুরু করে দেন। রাজাকে খাটো করতেই মূলত তাকে 'দিদ্দাক্ষেমা' নামে ডাকা হতো। স্বামীর অযোগ্যতার কারণে দিদ্দাই হয়ে উঠেন রাজ্যের প্রধান শাসক। তবে রাজা ক্ষেমাগুপ্ত কিন্তু দিদ্দার প্রতি মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন। তিনি স্ত্রীর নামে মুদ্রা প্রচলন করেন। দিদ্দা মানুষকে সহজেই প্রভাবিত করতে পারতেন।  অভিমন্যু নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন দিদ্দা। এর পরে ৯৫৮ সালে শিকারে গিয়ে 'লুতা' নামের এক জ্বরে আক্রান্ত হন রাজা ক্ষেমাগুপ্ত। তার মৃত্যুর পর ছেলে অভিমন্যু সিংহাসনে বসেন।

ছেলের হয়ে শাসন শুরু করেন
অভিমন্যু শিশু থাকায় দিদ্দাই তার অভিভাবক হিসেবে প্রধান শাসকে পরিণত হন। তিনি নিজের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ক্ষেমাগুপ্তর বোনের দুই ছেলে মাহিমান ও পাতালার বিরোধিতার মুখে পড়েন দিদ্দা। তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়ে কৌশলে এগোন। মাহিমান ও পাতালা ললিতাদিত্যপুরের ব্রাহ্মণদের সাহায্য নেন। যুদ্ধ করতে সৈন্যরা পাম্পোরের মন্দিরে ছুটে আসে। কিন্তু চতুর দিদ্দা যুদ্ধ না করে ছেলেকে শ্রীনগরের একটি মঠে পাঠান। সেখানে গিয়ে বিদ্রোহী ব্রাহ্মণদের অর্থের লোভ দেখিয়ে হাতে আনেন। ব্রাহ্মণদের অজস্র সোনা দিয়ে দিদ্দা শত্রুপক্ষের জোট ভেঙে দেন।
দিদ্দার বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন তার মন্ত্রী নরবাহন। এই বিদ্রোহের পর দিদ্দা নির্মমভাবে স্বামীর দুই ভাগ্নেসহ বিদ্রোহীদের হত্যা করেন। তবে যারা পরেও কাজে আসতে পারে, তাদের তিনি সেবারের মতো ছেড়ে দেন।
জানা যায়, দিদ্দা ৯৫৯ থেকে ৯৮০ সাল পর্যন্ত অভিমন্যু ও তার পুত্রদের হয়ে রাজ্য শাসন করেন। এই সময়ের মধ্যে তার নির্মমতা শু্ধু বিদ্রোহীদের হত্যার মধ্যে সীমিত ছিল না। তিনি মন্ত্রী কিংবা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সন্দেহ হলেই মৃতুদণ্ড দিতেন। ৯৭৫-৯৮১ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এর মধ্যে রানি  দিদ্দার ৩ পৌত্রের মৃত্যু হয়। পৌত্রদের মৃত্যু অনেকের কাছেই অস্বাভাবিক। ইতিহাসবিদরা দিদ্দার লোভের দিকে আঙ্গুল তোলেন। কলহনও তাঁর বইতে তেমনি ইঙ্গিত করেছেন।পরবর্তী বাইশ বছর কাশ্মীর উপত্যকা শাসনকরেন তিনি। উপত্যকাকে সুশৃঙ্খল এবং সমৃদ্ধ রাজ্যে পরিনত করেন।

দিদ্দার এক প্রেমের কথা জানা যায়,  রানি ছিলেন নিঃসঙ্গ।  ওই সময় টুঙ্গা নামের একজনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পর্ণোৎসার (পুঞ্চ) বাদ্দিভাসা গ্রামের বানা নামের এক ব্যক্তির ছেলে এই টুঙ্গা। টুঙ্গা প্রথমে মহিষ চড়ানোর কাজ করত। শ্রীনগরে সে চিঠিবাহকের কাজ নিয়ে আসে। কাহলানার মতে, ইতোমধ্যে দিদ্দার অসংখ্য প্রেমিক থাকলেও তরুণ এই যুবার প্রতি দিদ্দার অগাধ স্নেহ জন্মে।দিদ্দা এককভাবে পুরো ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠার পর টুঙ্গাকে নিজের প্রধানমন্ত্রীর (সর্বাধিকার) পদ দেন।  

১০০৩ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে রানি  দিদ্দার ৭৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তার ভ্রাতুষ্পুত্র উদয়রাজা সিংহাসনে বসেন।

সূত্র: ফ্রি প্রেস কাশ্মীর, লাইভ হিস্ট্রি ইন্ডিয়া

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ম র এক মন ত র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস

জমকালো সাজে সেজেছে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল। উপলক্ষটাও অনন্য, রাজকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে এখানে রাজকীয় নৈশ্যভোজ আয়োজন করেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।

বুধবার রাতের রাজকীয় এ আয়োজনে কূটনীতি, খাবার, ঐতিহ্য, সংগীত আর আভিজাত্য একসুতোয় বাঁধা পড়েছিল। ট্রাম্প–মেলানিয়াসহ রাজার অতিথি হয়েছিলেন বিশ্বের ১৬০ জন গণমান্য ব্যক্তি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মানে রাজা তৃতীয় চার্লসের আয়োজন করা রাজকীয় ভোজের টেবিল। যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ