ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার প্রয়াত মাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে। শুক্রবার দুই রাজ্যেই কংগ্রেস দপ্তরে ঢুকে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমের হাতে ইতিমধ্যেই যে ভিডিও এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দুই দলের কর্মীরা দলীয় পতাকার ডান্ডা দিয়ে একে অপরকে মারছেন। দুই রাজ্যেই সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই দলের বেশ কয়েকজন নেতা কর্মী।  

‘ভোটার অধিকারের যাত্রা’ চলাকালে দরভাঙ্গায় কংগ্রেসের পতাকা গায়ে জড়ানো এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে অশ্লীল মন্তব্য করেন। ওই ভিডিও ভাইরাল হতেই বিজেপি থানায় এফআইআর দায়ের করে এবং কংগ্রেসের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।

পরে দরভাঙ্গা পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এক্স-এ দারভাঙ্গা পুলিশ লিখেছে— “সিমরি থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করা হচ্ছে।”

কিন্তু ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি।শুক্রবার বিহারের পাটনায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে করে বিজেপি। পাল্টা কংগ্রেস কর্মীরাও মাঠে নামতেই দুই শিবিরের মধ্যে মারপিট লেগে যায়। সামাল দিতে নামানো হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও পাটনাজুড়ে রয়েছে থমথমে পরিস্থিতি। 

এদিকে বিহারের আঁচ এসে পড়ে কলকাতাতেও। কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য সদর দপ্তর বিধান ভবনের সামনে শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে বিজেপি। বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে বিজেপি সমর্থকরা কংগ্রেস দপ্তরে ঢুকে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালান বলে অভিযোগ। বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের নেতৃত্বে ভবনের বাইরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বলেও অভিযোগ। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ছবিসহ একাধিক ব্যানার, পোস্টারও ছেড়ার অভিযোগ উঠেছে। গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজ্য কংগ্রেস। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এন্টালি থানায়। 

গোটা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, “রাজনীতিতে দেউলিয়া না হলে কেউ এই কাজ করে না। গোটা দেশে কংগ্রেস যেহেতু বিজেপির চুরি ধরছে তাই তাদের রাগ আমাদের দলের উপর। এই কাজ করার জন্য এমন একটা সময় তারা বেছে নিয়েছে যখন দপ্তর ফাঁকা ছিল। আমরা রাজ্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি দোষীদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” 

বিহার কংগ্রেসের নেতা অশুতোষের অভিযোগ, “ঘটনায় সরকারেরই মদত রয়েছে। নীতীশ কুমার ভুল করছেন। আমরাও জবাব দেব।”

এদিকে বিজেপি নেতা নীতিন নবীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, “মায়ের অপমানের বদলা বাংলার প্রতিটি ছেলে কংগ্রেসকে দেবে। এর জবাব আমরা অবশ্যই নেব।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কড়া ভাষায় নিন্দা করে লেখেন, “রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস রাজনীতি সবচেয়ে নীচে নেমে গিয়েছে। একজন গরিব মায়ের ছেলে ১১ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী পদে বসে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা তারা মেনে নিতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীকে এবং তার প্রয়াত মাকে নিয়ে এই ধরনের ভাষা কেবল লজ্জাজনকই নয়, গণতন্ত্রের উপরও কলঙ্ক।”

বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা লেখেন, “এই ধরনের অশালীন আক্রমণ সব সীমা ছাড়িয়েছে। রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের ক্ষমা চাওয়া উচিত।”

ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী এবং তার প্রয়াত মাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করা অনুচিত। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।”

সুচরিতা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক

ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।

সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ