সিদ্ধিরগঞ্জে বিষ্ফোরনে হতাহতদের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসক
Published: 1st, September 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাস বিষ্ফোরনে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে দুটি পরিবারের ৭ জন নিহত ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২জনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া।
এ সময় তিনি নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহত প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ২ লাখ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রাশসক কার্যালয় প্রাঙ্গনে এ আর্থিক সহায়তা তুলে দেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা। শনিবার (২৩ আগস্ট) ভোরে পাইনাদি পূর্বপাড়ায় হিরাঝিল এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে।
এসময় জেলা প্রশাসক অগ্নিদ্বগ্ধ পরিবারের কথা শুনেন এবং তাদের সান্তনা দেন এবং বলেন এটা কোন সহযোগিতা না একজন মানুষ হয়ে একজন মানুষের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করা।
তিনি আরও বলেন, বিষ্ফোরনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কার গাফিলতিতে এ দূর্ঘটনা ঘটেছে তা বের করা হবে। যারা দোষী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শ্রমিক হাসান গাজী (৪০), তার স্ত্রী সালমা বেগম (৩২), মেয়ে জান্নাত (৪) এবং এক মাস বয়সী শিশু ইমাম উদ্দিন। আরেক কন্যা মুন্তাহা (১০) বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এ পরিবারের আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেন হাসানের ছোট ভাই রাকিবুল ইসলাম।
অন্য পরিবারে নিহত হয়েছেন গার্মেন্টসকর্মী আসমা বেগম (৩৫), তার মেয়ে তিশা (১৭) ও মা তাহেরা বেগম (৬০)। আসমার ছেলে আরাফাত (১৫), যিনি মাদ্রাসার ছাত্র, এখনও বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এ পরিবারের পক্ষে সহায়তা গ্রহণ করেন আসমার স্বামী তানজিরুল ইসলাম।
ডিসির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তানজিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রিয়জনদের তো আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তবে যেভাবে তিনি আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন, তা দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব করেছে। ডিসি স্যার সত্যিই একজন ভালো মানুষ।
তিনি আরও জানান, ডিসি ব্যক্তিগতভাবে তার ছেলে আরাফাতের খোঁজ নিয়েছেন এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বার্ন ইউনিটের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।
একইভাবে নিহত হাসান গাজীর ছোট ভাই রাকিবুল ইসলামও বলেন, অত্যন্ত ব্যস্ত সময়ের মাঝেও ডিসি স্যার আমাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। আমরা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ চাইলে তিনি পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ পর ব র র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ