কুষ্টিয়ায় দুস্থ নারীর তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের স্ত্রী
Published: 1st, September 2025 GMT
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মুকুলের বিরুদ্ধে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির অধীনে দুস্থ নারীদের তালিকায় নিজের স্ত্রী এবং ইউপি সদস্যদের স্ত্রীর নাম যুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মুকুল বলেছেন, “ফাঁসানোর জন্য কেউ হয়ত অনলাইনে আবেদনের সময় আমার স্ত্রীর নাম দিয়ে আবেদন করেছেন। আরো কয়েকজনের বিষয়ে অভিযোগ আছে। নাম যাচাইয়ে ত্রুটি ছিল। বিষয়টি ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) তদন্ত করছেন।”
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় অসহায় দুস্থ নারীদের প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। এরপর ইউপি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সরেজমিন যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় ১৮৭ জন দুস্থ নারী আবেদন করেন। ৯৭ জনকে চূড়ান্ত করে যাচাই-বাছাই কমিটি।
চলতি বছরের ৩০ জুন ভিডব্লিউবি নারী বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মুকুল, সদস্য সচিব হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও সর্বশেষ ইউএনওর স্বাক্ষরে ৯৭ জনের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়। তবে, তালিকায় প্রকৃত দুস্থ নারীদের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের স্ত্রীদের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় গত ২৪ আগস্ট ইউএনওর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন আমবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো.
তালিকায় ইউপি সদস্যদের স্ত্রী-স্বজন
চেয়ারম্যান ছাড়াও ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সোহেল রানার স্ত্রী মোছা. নুরুন্নাহার বেগমের নাম আছে তালিকার ৮৩ নম্বরে। স্বামী বা অভিভাবকের স্থলে লেখা রয়েছে রমজানপুর। তালিকায় ১৯ নম্বরে আছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনাজুল ইসলামের স্ত্রী ময়না খাতুন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দাউদ আলীর স্ত্রী জরিনা খাতুনের নাম আছে ৩৬ নম্বরে। ৪২ নম্বরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী মোছা. সুন্দরী আক্তারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অভিভাবকের স্থলে ভেদামারী গ্রাম লেখা রয়েছে। ইউপি নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যানকে যারা সহযোগিতা করেছেন, দলীয় সেসব লোকের স্বজনদের তালিকায় রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৭ নম্বরে নুর আলীর স্ত্রী মোছা. আমেনা খাতুন, ৫৪ নম্বরে সজীব আহম্মেদের স্ত্রী গুনি খাতুন, ২৩ নম্বরে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মারফত আলীর ভাগ্নি মোছা. জানেরা খাতুনের নাম আছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন থাইল্যান্ড প্রবাসী ছিলেন। তার দোতলা বাড়ি আছে। তার ছোট ভাইও থাইল্যান্ড প্রবাসী। এলাকায় তারা কোটিপতি হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন বলেছেন, তালিকায় অন্তত ১১ জনের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। যাচাই-বাছাইয়ে হয়ত ত্রুটি ছিল। উপজেলা পর্যায়ে নাম সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে।
ইউএনও মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে চেয়ারম্যানের স্ত্রীর নামসহ আরো কয়েকটি নামের বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আজ সোমবার সরেজমিনে তদন্ত হবে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কোনো অসঙ্গতি থাকলে তালিকা প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে সংশোধনের সুযোগ আছে।
ঢাকা/কাঞ্চন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমব ড় য় ক ত কর উপজ ল র ইউপ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী