ভারতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি বিদ্বেষ, বাঙালিদের ওপর হেনস্থা, বাংলা ভাষার ওপর সন্ত্রাসের অভিযোগে গত এক মাস ধরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, আন্দোলন করে আসছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। এর পাশাপাশি নতুন করে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো গত প্রায় এক মাস ধরে কলকাতার মেয়ো রোডে মহাত্মা গান্ধীর পাদদেশে মঞ্চ বেঁধে সপ্তাহে দুইদিন শনি ও রবিবার প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে আসছিল তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। 

কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল সোমবার সেই মঞ্চ ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনায় ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। 

আরো পড়ুন:

পুতিন-শির সঙ্গে মোদির বৈঠক ‘লজ্জাজনক’: ট্রাম্পের উপদেষ্টা

অশালীন স্পর্শের ভিডিও ভাইরাল, দাম্পত্য কলহ প্রকাশ্যে আনলেন অভিনেতার স্ত্রী

মঞ্চ খুলে ফেলার খবর পেয়েই সোমবার বিকালের দিকে রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্ন থেকে মমতা ছুটে আসেন মেয়ো রোডে। মমতার সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, রাজ্যের যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, দলের বিধায়ক দেবাশীষ রায়, মদন মিত্র, কলকাতা পৌরসভার কাউন্সিলর বৈশানর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। যদিও মমতা আসার সাথে সাথেই প্যান্ডেল খোলার কাজ বন্ধ রাখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। 

পরে ছাদ খোলা মঞ্চের তলায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “আমরা সব অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদ করি। আমি যখন এখানে আসছিলাম তখন দেখলাম প্রায় ২ শতাধিক সেনাবাহিনী সদস্য আমাকে দেখে ছুটে পালাচ্ছিল। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কেন ছুটে পালাচ্ছেন? আপনারা আমাদের বন্ধু। আমরা আপনাদের জন্য গর্বিত। এটা আপনাদের দোষ নয়। আপনারা বিজেপির কথায় করেছেন, দিল্লির কথায় করেছেন, কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে করেছেন। এটুকু বুদ্ধি আমাদের আছে। আমি সেনাবাহিনীকে কোনো দোষ দিচ্ছি না। আমি বিজেপি ও তাদের মন্ত্রীদেরকে দোষারোপ করছি। তারা যদি এভাবে সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করে আমাদের মতো একটি রাজনৈতিক দলের মঞ্চ ভেঙে ফেলে, স্টেজ, মাইক্রোফোন খুলে ফেলে.

..। সেনাবাহিনীর উচিত ছিল এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলা। এরপর কলকাতার পুলিশ কমিশনার আমাদের দলের সঙ্গে কথা বলতো, যদি কোনো আপত্তি থাকতো আমি এক মিনিটের মধ্যে সেটা খুলে দিতাম, আমার কোনো সমস্যা ছিল না।” 

মমতার বক্তব্য, ‘আমি এটা বলার জন্য খুবই দুঃখিত যে, এই ঘটনার পিছনে সেনাবাহিনী নয়, রয়েছে বিজেপি। জোর করে তারা আমাদের প্যান্ডেল খুলে দিয়েছে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বিজেপি সেনাবাহিনীকে অপব্যাবহার করছে। বিজেপি দেশের লজ্জা, ডাবল ইঞ্জিন সরকার দেশের লজ্জা।”

মমতার অভিমত, “আমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই। কারণ আমরা সেনাবাহিনীর জন্য গর্বিত। কিন্তু সেনাবাহিনীকে যখন বিজেপির কথা চলতে হয় তখন দেশটা কোথায় যায়, সেটা নিয়ে সন্দেহ জাগে।” 

মমতা প্রশ্ন, “আমার তৃণমূল কংগ্রেসের ঝাণ্ডা সরিয়ে দেওয়ার তুমি কে? বাংলা ভাষার উপরে যে সন্ত্রাস চলছিল তার স্বপক্ষে আমাদের যে ব্যানার ছিল তা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরো প্যান্ডেলটাকে খুলে ফেলা হয়েছে। আমি খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমি দুঃখিত, শোকাহত, মর্মাহত। গণতন্ত্রের এই কথাগুলো বলার জন্য আর কেউ নেই তাই খোলা আকাশকেই এই কথাগুলো বললাম।” 

তার অভিমত, “আসলে কেন্দ্রীয় সরকার ভাবছে, বিরোধীদের প্রতিবাদের জায়গাগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দাও। কিন্তু এতে আমরা আরো বেশি শক্তিশালী হচ্ছি। আমরা বাংলা ভাষাকে আরো বেশি করে চর্চা করব। আমাদের ভাষার অস্মিতাকে রক্ষা করব, পাশাপাশি অন্য ভাষাকেও ভালোবাসবো। বাংলা ভাষার কোনো বিকল্প নেই। এই মাতৃভাষাকে যদি কেউ অসম্মান করেন তবে আমাদের থেকে আর কেউ খারাপ হবে না। রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিকভাবে তার মোকাবিলা করব।”  

তবে মেয়ো রোডে ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ খুলে দেওয়ার পর কলকাতার ধর্মতলায় রানী রাসমণি রোডে নতুন করে মঞ্চ বেঁধে তৃণমূলের ভাষা আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মমতা। সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র শনিবার ও রবিববার নয়, এবার সাত দিনই ভাষা আন্দোলন চলবে। 

যদিও সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দুই দিনের জন্য মঞ্চ বাধার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রায় এক মাস ধরে মঞ্চ বাধা রয়েছে। তিনদিনের বেশি অনুষ্ঠান হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের থেকে অনুমতি নিতে হবে। অস্থায়ী কাঠামো খুলতে আয়োজকদের বেশ কয়েকবার রিমাইন্ডার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাও সরানো হয়নি। কাঠামো সরাতে সেনাবাহিনীর তরফে কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়েছিল, তারপরেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত ক কলক ত র মন ত র আম দ র র জন য মমত র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক

ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।

সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ