ফাঁকা পড়ে আছে বিএনপির মঞ্চ, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা
Published: 3rd, September 2025 GMT
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) যে মঞ্চে কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল, সেটি এখন ফাঁকা পড়ে আছে। মঞ্চের পেছনে বসে রয়েছে পুলিশ। দলটির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় কর্মসূচি বাতিল হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা সদরে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরীফ উদ্দীন এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সুলতানুল ইসলাম তারেকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় এক পক্ষের নেতা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
আরো পড়ুন:
যে কারণে সুন্দরগঞ্জে মুখোমুখি বিএনপির দুই পক্ষ
রাজশাহীতে বিএনপির ২ গ্রুপে সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা সদরে একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণা দেয় দুই গ্রুপ। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকেল ৪টার দিকে ইট নিক্ষেপের মাধ্যমে সংঘর্ষে জড়ায় পক্ষ দুইটি। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলতে থাকে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলা সদরে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে শরীফ উদ্দীনের গ্রুপের অন্তত সাতজন আহত হন। তাদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা এবং পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান বিপ্লব রয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদ। বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে সেনাবাহিনী টহল দেয়।
সংঘর্ষ কেন হলো জানতে চাইলে সুলতানুল ইসলাম তারেক গ্রুপের নেতা ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, দুই পক্ষ যদি আলাদা জায়গায় অনুষ্ঠান করত তবে কোনো ঝামেলা হতো না। শরীফ উদ্দীনের গ্রুপ উপজেলা কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিল। এ নিয়ে তারা ইউএনও অফিসে আপত্তি জানান। পরে জানতে পারেন, শরীফ উদ্দীনের অনুসারীরা তাদের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে এবং চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেছে। এরপরই সংঘর্ষ শুরু হয়।
শরীফ উদ্দীনের গ্রুপের সমর্থক ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বেদার উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারা মঞ্চ তৈরি করছিলেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) কাজ চলার সময় সুলতানুলের পক্ষ এসে বাধা দেয়। মঙ্গলবারও তারা একইভাবে বাধা দেয় এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে তাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনার পর রাতেই উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বেদার উদ্দিন বাদী হয়ে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলায় পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামালায় আরো ৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপতৎপরতা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। দায়ের করা মামলাটি রেকর্ড হয়েছে এবং তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ১৪৪ ধ র স ঘর ষ ব এনপ ব এনপ র স ব র রহম ন স ঘর ষ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।