ছাত্রীদের যৌনকর্মী বলা ছাত্রদল নেতার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 4th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জুলাই ৩৬ হলে রাত ১১টার পর প্রবেশ করা ছাত্রীদের যৌনকর্মী বলে মন্তব্য করেছেন আনিসুর রহমান নামে এক ছাত্রদল নেতা। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং ছাত্রদল নেতার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ওই হলের ছাত্রীরা।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন।
এ সময় তারা ‘ইভটিজারের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘নারীদের বুলিং করে, প্রশাসন কি করে?’, ‘ইভটিজারের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ বলে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভ থেকে ছাত্রীরা তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবি তিনটি হলো- ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমানের স্থায়ী বহিষ্কার, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে; সাইবার বুলিং সেল গঠন করতে হবে এবং ফেসবুকে যাবতীয় অশালীন মন্তব্যের জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
আনিসুর রহমান মিলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন। অভিযোগ ওঠার পর রাতে ওই নেতার পদ স্থগিতের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল জানিয়েছে, বিষয়টির সত্যতা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত সংগঠন আনিসুর রহমানের পদ স্থগিত করেছে। সত্যতা যাচাই ও সঠিক তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাকিলুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পদাক শফিকুল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “প্রাথমিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, তার আইডির নিয়ন্ত্রণ তার ছিল না। সাংগঠনিক দায়িত্বে থেকে এমনটা করার কথা না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যদি ঘটনার সতত্য পাওয়া যায়, তাকে আজীবনের জন্য ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ছাত্রদল থেকে সুপারিশ করা হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.
অন্যদিকে, ছাত্রদল নেতার অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ ও তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্যারিস রোডে একযোগে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, একই সময়ে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন ও সোচ্চারও বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে, জুলাই ৩৬ আবাসিক হলে রাত ১১টার পর প্রবেশ করায় ৯১ ছাত্রীকে হল প্রাধ্যক্ষের অফিসে ডেকে পাঠিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় হল প্রশাসন। এ ঘটনায় তৈরীকৃত ফটোকার্ডের নিচে ‘এগুলো ছাত্রী নয়, এগুলো বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী’ বলে মন্তব্য করেন আনিসুর রহমান মিলন।
গত সোমবার রাত ১১টার পরে হলে ফেরায় জুলাই ৩৬ হলের ৯১ ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের অফিসে তলব করে নোটিশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তির একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরদিন মঙ্গলবার সমালোচনার মুখে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে নোটিশটি প্রত্যাহার করে নেয় হল প্রশাসন।
ঢাকা/ফাহিম/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ন ত
এছাড়াও পড়ুন:
হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার
স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।
আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।
হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’