বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষার অপমান এবং বাঙালিদের হেনস্থার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতাকে ঘিরে ব্যাপক হট্টগোল হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায়। বাংলা ও বাঙালি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনায়  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য দিতে উঠলে উত্তাল হয়ে উঠে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। তুমুল হইহট্টগোল শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। এর প্রতিবাদ করতে নামে তৃণমূলও। পরিবেশ এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, নিজের আসন ছেড়ে ওয়েলে নেমে আসেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। 

সাসপেন্ড করা হয় একাধিক বিজেপি বিধায়ককে। অধিবেশন থেকে বহিষ্কৃত বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে কার্যত খন্ডযুদ্ধ শুরু হয় মার্শালদের। বেনজির এমন উত্তেজনার মধ্যেই নিজের বক্তৃতা চালিয়ে যান মমতা, তীব্র আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ ও বিজেপিকে।বলেন বিধানসভার কালো দিন

অন্য রাজ্যে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনার কথা ছিল বিধানসভায়। সেই মতো বক্তৃতা দিতে ওঠেন মমতা। সেই সময় বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দিতে শুরু করেন। এমনকি মমতাকে লক্ষ্য করে বিজেপি বিধায়করা কাগজও ছোড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। এর জবাবে তৃণমূলের তরফেও পাল্টা স্লোগান দেওয়া হয়। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে শান্ত হতে বললেও, বিজেপি বিধায়করা হাত নেড়ে, হাততালি দিয়ে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে দেবেন না তারা। সেই নিয়ে  তুলকালাম শুরু হয়ে যায়। মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে দিতে হয় মমতাকে। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। ‘ভোট চোর’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। 

তার উদ্দেশে কাগজ ছোড়া নিয়ে মমতা বলেন, “বিধানসভায় এই যে কাগজ ছুড়ছেন, তা কিন্তু অনৈতিক, অসংসদীয়, অগণতান্ত্রিক, বেআইনি। আমি যদি বাংলায় কথা বলি, মানুষ যদি আমারটা জানতে পারে, এদের মুখোশ খুলে যাবে। এরা দুর্নীতিবাজ, এরা গদি চোর, এরা ভোট চোর। সবচেয়ে বড় ডাকাতের দল, দুর্নীতিবাজদের দল, ভোট চোরদের দল। বাঙালির উপর অত্যাচার চালানো, মানুষকে ভাঁওতা দেওয়া, সন্ত্রাস চালানো, অত্যাচারী দল। আমি মনে করি, বিজেপি আজ দেশের লজ্জা। তীব্র ধিক্কার জানাই আমি। বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস, অত্যাচারের জন্য ধিক্কার জানাই। একটা দিন আসবে, যেদিন বাংলার মানুষ বলবেন, একটা বিজেপি-কেও এখানে দেখতে চাই না। বাংলার উপর অত্যাচার করে সবক'টা হারবে। বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস চালিয়ে বাংলায় জেতা যায় না। সংসদেও একই জিনিস দেখেছি। আমাদের সদস্যদে গায়ে হাত তোলা হয়েছে, CISF, BSF ঢোকানো হয়েছে, আমাদের লোকেদের মারা হয়েছে। আমরা সেটা করব না। কারণ এটা নবজাগরণের বাংলা, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের বাংলা।”

তিনি বলেন, “বিজেপি বিধায়কদের ধিক্কার জানাই। নিজেদের বক্তৃতার সময়ই থাকে না। তারপরও আমার সময় কেটে সময় দিয়েছি। এরা বাংলাবিরোধী। বাংলা ভাষা নিয়ে আলোচনা চায় না। এরা বাংলা ভাষার উপর অত্যাচার চালায়। এরা বাঙালিবিরোধী। মানুষ যাতে আমাদের কথা শুনতে না পায়, তাই এসব করছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে শাসকদের দলের সদস্যদের শআন্ত থাকতে বলেছি। কিন্তু শান্তি রক্ষা করা দুই পক্ষের কাজ, কোনো একপক্ষের নয়।”

মমতা বলেন “এদের মতো অপদার্থ, নির্লজ্জ, অসভ্য দল জীবনে দেখিনি আমি। উল্টোপাল্টা বলে গেল নিজে। সকাল থেকে ছিল না। আমি আসার কিছুক্ষণ আগে এসেছে। আমার কণ্ঠরোধ করতে এই কর্মসূচি। ওদের নাম ডাকা হলেও বক্তৃতা করেনি। তারপরও বলতে দিতে অনুরোধ করেছিলাম। তারপর নিজেদের বক্তৃতা হয়ে যেতেই এসব.

..এটা বাঙালির ইস্যু, বাংলার ইস্যু, আমি বলবই। আমাকে চুপ করানো যাবে না, বাংলা, বাঙালির কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা। আর এরা হচ্ছে একটা দল, স্বাধীনতায় যাদের কোনো অবদান ছিল না। দেশের সবচেয়ে বড় ডাকাত, ডাকাতদের সর্দার, দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছে, মানুষকে বিক্রি করছে। এরা সাম্প্রদায়িকতার সুড়সুড়ি দেয়, মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করে। স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার মানুষ সবচেয়ে বেশি প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সেদিন বিজেপি-র লেজুড়রা ইংরেজদের কাছে দাসখত দিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী যখন বলছিলেন ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’, এরা তখন ইংরেজদের সঙ্গে মিলে ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এরা বিশ্বাসঘাতক।”

এখানেই থামেননি মমতা। তাকে বলতে শোনা যায়, “এটা বাংলা। সব জায়গায় মুখ বন্ধ করে দিতে পারেন, বাংলায় পারবেন না। যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, আগামী দিন বিজেপি-র কেউ নির্বাচিত হবেন না।” 

এসময়ে টাকা, অস্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বিজেপি ভোটে জেতে বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তার বক্তব্য, “লজ্জা করে না! টাকা দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, নির্বাচন কমিশন দিয়ে ভোট করিয়ে জিতে আসেন। আগামী দিন তাকিয়ে দেখবেন। আজ ভয় পেয়েছে। চোরের মায়ের বড় গলা। ভয় পেয়েছে বলে বাংলার মানুষকে হেনস্থা করছে, বাংলা ভাষার উপর অত্যাচার করছে।”

বিজেপি-র তরফে ফের ‘চোর’ স্লোগান শুরু হলে মমতা বলেন, “মোদি চোর, গোদি চোর, মোদি চোর, বিজেপি চোর, সবাই স্লোগান দাও। মোদি চোর, বিজেপি চোর, অমিত শাহ চোর, মোদি চোর, বিজেপি চোর। সবক’টা চোর। চোরেদের দল, ডাকাতদের দল।”

বৃহস্পতিবার বাংলা সংক্রান্ত  আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রীরই মূলত বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু তাতেই বাধা দিতে শুরু করেন বিরোধীরা। দফায় দফায় বাধাপ্রাপ্ত হয় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ। তিনি বিজেপি বিধায়কদের বলার অনুমতি দিতে বলেন স্পিকারকে। কিন্তু তারপরও অশান্তি জারি থাকে। এর আগে গত মঙ্গলবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে হট্টগোলের জেরে সাসপেন্ড করা হয়েছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। বৃহস্পতিবারও তুমুল হট্টগোলের দায় চাপিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সাসপেন্ড করেছেন বিজেপির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল, মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা, বঙ্কিম ঘোষদের। এরপরেই কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নয় বিধানসভার কক্ষ। বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে মার্শালদের হাতাহাতি হয়। এরপরই তৃণমূল বিধায়করাও পালটা প্রতিবাদে নামেন। বিজেপিবিরোধী স্লোগান তুলতে থাকেন। যদিও মমতার বক্তব্য শেষ হতেই ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা।

সুচরিতা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন দ য প ধ য ম খ যমন ত র ভ ষ র উপর ব ধ নসভ র র বক ত ত ব ধ য়কর দ র দল ন মমত

এছাড়াও পড়ুন:

ডাকসুর বিবৃতি: বিএনপি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে

জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, এমন বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। রোববার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বিপ্লব। শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ ও একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোনো প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।

ডাকসুর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, যা সরাসরি ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ