ভুল মানুষ বেছে নিলে জীবনে দুঃখ অনিবার্য: আমির খান
Published: 5th, September 2025 GMT
বলিউডের দাপুটে অভিনেতা আমির খান। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক নারীর সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। রিনা দত্তকে ভালোবেসে প্রথম বিয়ে করেন তিনি। এ সংসারে জুনায়েদ ও ইরা খান নামে দুটো সন্তান রয়েছে। রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিরণ রাওকে বিয়ে করেন আমির। এ সংসারে আজাদ খান নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। তবে দুটো সংসারই ভেঙে গেছে তার। আমির এখন গৌরি স্প্রাটের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে আমির খান নানা ধরনের চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। সম্পর্কের নানা মাত্রিক সমীকরণ দেখেছেন। সম্পর্কের অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিল্মফেয়ার-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আমির খান। যদিও এ নিয়ে কথা বলতে শুরুতে অসম্মত হন, তারপরও বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন মিস্টার পারফেকশনিস্ট।
আরো পড়ুন:
আশা-লতা মঙ্গেশকরের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ রফি পুত্রের গুরুতর অভিযোগ
ফের মা হলেন গওহর খান
আমির খান বলেন, “আমি কে যে উপদেশ দেব? সম্পর্কের দিক থেকে আমি খুব একটা সফল নই। কিন্তু হ্যাঁ, বিবাহবিচ্ছেদের পরও আমার সম্পর্কগুলো ভাঙেনি—এটাই তো এক ধরনের সাফল্য।”
কয়েক বছর আগে থেরাপি শুরু করার পর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। আমির খান বলেন, “তার আগে আমি সবসময় ভাবতাম কেউ আমাকে বুঝতে পারছে না। মনে হতো দোষটা অন্যদের। কিন্তু থেরাপি আমাকে বুঝিয়েছে— সুখ কারো হাতে নয়, নিজের হাতেই।”
ভুল মানুষ বেছে নিলে জীবনে দুঃখ অনিবার্য। এ তথ্য উল্লেখ করে আমির খান বলেন, “আপনি যখন কোনো সম্পর্কে জড়ান, তখন আপনি কাউকে বেছে নিচ্ছেন জীবনের পথে হাতে হাত রেখে চলার জন্য। যদি ভুল মানুষকে বেছে নেন, তাহলে দুঃখ অনিবার্য। থেরাপি আমাকে সেই ‘রেড ফ্ল্যাগ’ চিনতে শিখিয়েছে। এখন আমি কারো সঙ্গে দুই মিনিট কথা বললেই ১৫-২০টা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ ধরতে পারি আর সঙ্গে সঙ্গে সরে আসতে পারি।”
সফল সম্পর্কের জন্য আমির খান তিনটি নিয়ম মানার পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হলো—এক.
কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের প্রস্তুতি খুব জরুরি বলে মনে করেন আমির খান। তার মতে, “যদি আমি নিজেই ট্রিগার হই আর সেই রাগ অন্যের উপর ঝাড়ি, তাহলে দোষ কাকে দেব? থেরাপি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, আমরা আদৌ একজন সঙ্গী চাই কি না। না কি আগে নিজেকে গড়ে তোলা জরুরি। অনেক সময় আপনি বুঝতে পারেন, আপনি একা থাকতেই পছন্দ করেন। কিংবা প্রথমে নিজের কিছু সমস্যার সমাধান দরকার। এটা আপনাকে আবেগগত দায়িত্বশীলতা শেখায়।”
সমাজে পরিণত মানুষ হতে শেখানো হয় না বলে মনে করেন আমির খান। তার ভাষায়, “আমরা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে প্রশিক্ষণ নিই। কিন্তু একজন পরিণত মানুষ হতে শেখানো হয় না। থেরাপি সেই হারিয়ে যাওয়া প্রশিক্ষণ হতে পারে।”
তরুণ প্রজন্মকে সম্পর্ক সম্পর্কে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমির খান বলেন, “সম্পর্ক হওয়া উচিত ইতিবাচক, সুস্থ, এবং সহায়ক। যা আপনাকে জীবনের মানে দেয়। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে মূল্য না দেন, তাহলে অন্য কাউকে কীভাবে আপনার সেরাটা দেবেন?”
সহজ ও আন্তরিক বার্তা দিয়ে আমির খান বলেন, “নিজেকে মূল্য দিন। আপনার সঙ্গীকেও মূল্য দিন। আর সবার হাতে হাত রাখতে যাবেন না। তার আগে বলুন, ‘তোমার রেড ফ্ল্যাগগুলো দেখাও!”
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র খ ন ন আম র খ ন আম র খ ন ব
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ