জীবনঘাতি তামাক থেকে তরুণ-তরুণী, নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। 

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী আয়োজিত ‘তরুণ-তরুণী, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

আরো পড়ুন:

রামুতে ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবাসহ যুবক গ্রেপ্তার 

রাকসু নির্বাচন: ডোপ টেস্টের জন্য ৫৭০ প্রার্থীর স্যাম্পল সংগ্রহ

তিনি বলেন, ‘‘তরুণ ও শিশুরাই আগামীর কান্ডারি। আর নারীরা হলো সেই কান্ডারি গড়ার কারিগর। এই শিশু, তরুণ ও নারীদের সুস্থ্য রাখার অন্যতম শর্ত হলো তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। এ লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমি অবিলম্বে প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’’

তিনি আরো বলেন, “প্রতিদিন ৪৪২ জনের প্রাণ যাচ্ছে। এতো মহামারি। একটা রাষ্ট্র এতটা উদাসীন হতে পারে না। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস নিয়ে সরকারের মধ্যে যে দ্বিমত আছে তা খণ্ডন করতে হবে। এই সংশোধনী পাস না হলে আমাদেরকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”

সেমিনারে জানানো হয়, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা ।

২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ’ খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সেই বৈঠকে খসড়াটি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করার জন্য অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু সম্প্রিতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে বিষয়টি পর্যালোচনার নামে পরিণত হয়েছে তামাক কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষিতে।

এ প্রসঙ্গে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা.

গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘‘২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)–এ স্বাক্ষর করে এবং ২০০৮ সালে এর ৫.৩ ধারা বাস্তবায়নের গাইডলাইনেও সম্মতি দেয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি যে, বর্তমান সরকার তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তাই অবিলম্বে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইদানিং দেখা যাচ্ছে টোব্যাকো পলিটিক্স শুরু হয়েছে। আমাদের এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।”

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি বলেন, ” তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে কারোও কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো এটলাস অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়—প্রতিদিনের হিসাবে যা ৪৪২ জন। এ লক্ষ্যে সরকার ইতিমধ্যে ই-সিগারেট আমদানী ও দেশের অভ্যন্তরে ই-সিগোরেট উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইন অনুমোদিত হলে এই মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব হবে।”

তিনি আরো বলেন, “তামাক কোম্পানিতে সরকারে শেয়ার রয়েছে, এটা হতে পারে না। আমি অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি সভাপতিত্বে সেমিনারে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারী ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান।

সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো পাস হলে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং জনস্বাস্থ্যে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তারা আরো বলেন, “এই সরকার যেহেতু মুনাফামুখী সরকার নয়, তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পান করার জন্য এই সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।”

একটি তামাকমুক্ত সুস্থ জাতি গঠনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের খসড়া দ্রুততম সময়ে পাস এই মুহুর্তে অন্যতম সময়ের দাবী বলে তারা মনে করেন।

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব উপদ ষ ট র জন য দ ধ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ