জেলা প্রশাসকের বাসভবনের প্রাচীর থেকে মুছে ফেলা হলো ‘জুলাই গ্রাফিত
Published: 5th, September 2025 GMT
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের সীমানা প্রচীর সংস্কারের কাজ চলছে। এ কারণে প্রাচীরে আঁকা জুলাই অভুত্থানের গ্রাফিতি মুছে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেয়াল সংস্কারের জন্য গ্রাফিতি মুছে দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে নতুন করে গ্রাফিতি আঁকা হবে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, সাদা রং দিয়ে জুলাই স্মৃতি হিসেবে আঁকা গ্রাফিতি ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের বাসভবনের আগের দেয়াল আরো কয়েক ফুট উচু করতে, পুরো দেয়ালে রং করতে এবং দেয়ালের উপরে কাঁটাতার লাগানোসহ কিছু আনুষঙ্গিক কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ১৮ লাখ টাকা মোট ব্যয় ধরে কাজটি বাস্তবায়নে কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, “জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সম্পূর্ণ দেয়াল ১ হাজার ৮০০ ফুট। এর মধ্যে ৩০০ ফুটে কাঁটাতার দেবে ঠিকাদার। দেয়ালের উন্নয়ন কাজ চলছে। সব কাজ শেষ হতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে।”
সংস্কারের নামে জুলাই স্মৃতির গ্রাফিতি মুছে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, “আগেও গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার অজুহাতে শহরের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ভবনের দেয়াল থেকে শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি মুছে ফেলছিল জেলা প্রশাসন। পরে জেলা প্রশাসক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর কোনো গ্রাফিতি মুছা হবে না। এবার জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দেয়াল থেকেই গ্রাফিতি সরানো হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাজ্জাদ হোসাইন সজীব বলেন, “প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আন্দোলনের স্মারক মুছে ফেলা গর্হিত কাজ।”
গ্রাফিতি মুছে ফেলার বিষয়ে এনডিসি সাইফুল্লাহিল গালিব জানান, দেয়াল সংস্কারের জন্য গ্রাফিতি মুছে দেওয়া হয়েছে। পরে নতুন করে গ্রাফিতি আঁকা হবে।
গ্রাফিতি মুছে ফেলার বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মফিদুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মিলন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাতে বাড়িতে পুলিশের অভিযান, ভোরে ধানখেতে পাওয়া গেল রক্তাক্ত মরদেহ
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে জমিজমার বিরোধে থানায় করা এক মামলার আসামিকে ধরতে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে আজ শুক্রবার ভোরে বাড়ির পাশে একটি ধানখেত থেকে তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
মরদেহ উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবু সাদাদ সায়েম (৫০)। তিনি উপজেলার কৈচাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। এলাকায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাতেন তিনি।
পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত সাদাদের বাবা মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে দুই পরিবারের মধ্যে গত শুক্রবার মারামারির ঘটনা ঘটলে প্রতিপক্ষের লোকজন হালুয়াঘাট থানায় আটজনের নামে একটি মামলা করেন। মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন সাদাদ। গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হালুয়াঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সাদাদ পালিয়ে যান। তাঁকে না পেয়ে ফিরে আসে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ চলে যাওয়ার পর সাদাদ বাড়িতে ফিরে না আসায় স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে আজ ভোরে বাড়ির পাশের একটি ধানখেতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
সাদাদের বাবা মোসলেম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে তাঁর জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জেরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে তাঁরা থানায় মামলা করেন। আগামী রোববার দুই ছেলের জামিন নেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই তারা (প্রতিপক্ষ) তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সাদাদের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতায় বাদীপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করে ধানখেতে ফেলে রেখে যায়। অথচ কোনো আসামি ধরবে না বলে পুলিশ আমাদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিল। আমরা আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’
এ ঘটনার পর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হালুয়াঘাট থানার এসআই মানিক মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘গতকাল রাতে মামলার আসামিকে ধরতে গেলে আমরা পাইনি। ওই সময় হয়তো আমাদের উপস্থিতি দেখে পালিয়েছিল। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই সত্য নয়।’
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত সাদাদের শরীরে জখম, ছিলে যাওয়া ও কামড়ের মতো আঘাত আছে। তবে গুরুতর কোনো আঘাত তাঁরা দেখতে পাননি। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তিনি বলেন, পুলিশ তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আসামি ধরতে যায়। ঘরে না পাওয়ায় পুলিশ চলে আসে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তাঁরা প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবেন।