থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে আজ শুক্রবার এক ডানপন্থী ধনকুবের ব্যবসায়ীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এর ফলে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা এক শীর্ষ রাজনৈতিক পরিবারকে গদি হারাতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে পরিবারটির নেতা আদালতের নির্দেশে পদচ্যুত হয়েছেন।

২০২৩ সালের নির্বাচনের পর থেকে শক্তিশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের ফিউ থাই পার্টি থাইল্যান্ডের শীর্ষ পদ দখল করে রেখেছিল; কিন্তু গত সপ্তাহে আদালতের রায়ে এ পরিবারের উত্তরসূরি পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে পদচ্যুত করা হয়।

ক্ষমতার শূন্যস্থান পূরণে তৎপর হয়ে নির্মাণ খাতের সফল ব্যবসায়ী অনুতিন চার্নভিরাকুল বিরোধী দলের যথেষ্ট সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। এ সমর্থন তাঁকে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সুবিধাজনক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী পদে এ ভোট শুরু হওয়ার কথা স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (জিএমটি ০৩:০০)। পার্লামেন্ট ভবনটি অনুতিনের পারিবারিক নির্মাণপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে।

পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী পদে ভোট শুরু হওয়ার কথা স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (জিএমটি ০৩:০০)। পার্লামেন্ট ভবনটি অনুতিনের পারিবারিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে।

অনুতিন গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে একমাত্র সাধারণ শত্রু হলো যিনি দেশের শত্রু। আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে।’

৫৮ বছর বয়সী অনুতিন আগে উপপ্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত ২০২২ সালে গাঁজা আইনসিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য।

পর্যটননির্ভর দেশ থাইল্যান্ডে কোভিড-১৯ মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অনুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে ভাইরাস ছড়ানোর জন্য দোষারোপ করেছিলেন এবং পরে সমালোচনার মুখে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।

অনুতিন একসময় পেতংতার্নের জোটকে সমর্থন করেছিলেন; কিন্তু এ গ্রীষ্মে প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্ত বিরোধের সময় তাঁর আচরণে আপত্তি প্রকাশ করে ওই সমর্থন ত্যাগ করেন তিনি।

থাইল্যান্ডের সংবিধানিক আদালত গত ২৯ আগস্ট এক সিদ্ধান্তে জানিয়েছিলেন, পেতংতার্নের আচরণ মন্ত্রিপরিষদ নীতির লঙ্ঘন। আদালতের আদেশে মাত্র এক বছরের শাসনের পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

এ অবস্থায় একাই এগিয়ে গিয়ে অনুতিন সর্ববৃহৎ বিরোধী দল পিপলস পার্টির ১৪৩ আসনের সমর্থন পেতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তাঁকে শর্ত দেওয়া হয়েছে, পার্লামেন্টকে চার মাসের মধ্যে ভেঙে নতুন নির্বাচন করতে হবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে একমাত্র সাধারণ শত্রু হলো, যিনি দেশের শত্রু। আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে।অনুতিন চার্নভিরাকুল, প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী

তবু, অনুতিনের নিজের দল ভুমজয়থাই পার্টির নির্ভরযোগ্য সমর্থন ও অন্যান্য ছোট অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। ভুমজয়থাই পার্লামেন্টের তৃতীয় বৃহত্তম দল।

সিনাওয়াত্রার ফিউ থাই দল এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করছে এবং আজকের ভোটের আগে পার্লামেন্ট ভাঙার জন্য রাজার কাছে চূড়ান্ত আবেদন করেছিল।

তবে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই জানিয়েছেন, রাজকীয় কর্মকর্তারা এ আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের মতে, অন্তর্বর্তী প্রশাসন হিসেবে ফিউ থাই দলের এ পদক্ষেপ গ্রহণের বৈধতা নিয়ে ‘বিবাদমূলক আইনি সমস্যা’ রয়েছে।

আজকের ভোটের আগে ফিউ থাই দল ঘোষণা করেছে, তারা চাইকাসেম নিতিসিরিকে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে রাখবে। সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিচারমন্ত্রী ছিলেন তিনি।

ভোট জিতি বা হারি-এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।সোরাওয়ং থিয়েনথং, ফিউ থাই পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল

গতকাল ফিউ থাই পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল সোরাওয়ং থিয়েনথং হতাশার সুরে এএফপিকে বলেন, ‘ভোট জিতি বা হারি—এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা গত জুনে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, ওই ফোনকলে নৈতিকতা লঙ্ঘন করেছেন পেতংতার্ন।

ফোনকলে পেতংতার্নকে আপসমূলক মনোভাব প্রকাশ করতে দেখা যায়। থাইল্যান্ডের সামরিক কমান্ডারদের সমালোচনাও করেছিলেন তিনি। পরে যদিও আত্মপক্ষ সমর্থন করে পেতংতার্ন বলেছিলেন, ওই ফোনকলের মাধ্যমে কূটনৈতিক সাফল্য পেতে চাইছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনএকটি ফোনকল ফাঁস কীভাবে থাই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনল৩০ আগস্ট ২০২৫

পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রার পুরোনো বন্ধু হুন সেন। পেতংতার্ন বলেন, ওই ফোনের কথাবার্তা গোপন থাকা উচিত ছিল। ফোনের আলাপ–আলোচনা ফাঁস ছিল তিনি ও তাঁর দল ফিউ থাই পার্টির জন্য খুবই অস্বস্তিকর। এর জেরে পেতংতার্নের পদত্যাগের দাবি ওঠে। ক্ষমতাসীন জোটে তাঁর সবচেয়ে বড় অংশীদার দলও সরকার ছেড়ে যায়। এতে পার্লামেন্টে খুব সীমিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টিকে ছিলেন তিনি।

ফোনের আলোচনা ফাঁসের ঘটনার পর গত জুলাইয়ে সাংবিধানিক আদালতের নয় বিচারকের সাতজনই পেতংতার্নের প্রধানমন্ত্রিত্ব স্থগিত রাখার পক্ষে ভোট দেন। বিচারকদের প্রায় সবাই একই সিদ্ধান্ত দেওয়ায় এটা বোঝাই যাচ্ছিল যে চার উত্তরসূরির মতো একই ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন পেতংতার্ন। তাই তাঁকে বরখাস্ত করে দেওয়া আদালতে রায় অবাক করে দেওয়ার মতো কিছু ছিল না।

আরও পড়ুনপেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করলেন থাইল্যান্ডের আদালত২৯ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক বরখ স ত স ত কর মন ত র ন র জন অন ত ন র জন য পর ব র কর ছ ল ন কর ছ ফ নকল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ