‘শেখ হাসিনার পতন হলেও, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি’
Published: 6th, September 2025 GMT
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ১৩তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার দুপরে জেলা আইনজীবী ভবন চত্বরে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে দলটির জেলা সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন জাতীয় পতাকা ও জেলা সভাপতি আবদুর রহমান রুমী দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে শহরে দলটি একটি লাল পতাকা মিছিল বের করে। এতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘‘ছাত্র জনতার গণঅভুত্থানে ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই গণঅভুত্থানে অংশ নিয়েছে। সহস্রাধিক মানুষ গণঅভুত্থানে মৃত্যুবরণ করেছে। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে কিন্তু দুর্ভাগ্য শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদ হয়েছে ঠিকই তবে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।’’
‘‘সেই লুটেরা ধনীক গোষ্ঠী, সেই প্রশাসন, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেই বিদেশি শক্তিগুলো আজকে বাংলাদেশে একটা ভীতিকর এবং নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ফলে দেশে বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্রজনতার যে গণঅভুত্থান হয়েছে, সেই স্বপ্ন থেকে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছি,’’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
‘‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হাসিনা সরকার ভূলুণ্ঠিত করেছে। আজও দেখছি মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের গণঅভুত্থানের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতিকে মুছে ফেলবার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আমরা কমিউনিস্টরা কিছুতেই এটা মেনে নেব না।’’
সিপিবি নেতা আরো বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো আমাদের ভিত্তি। আর চব্বিশের চেতনা আমাদের আকাঙ্খা, বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। আর বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, কৃষকের পাশে থাকতে হবে, শ্রমিকের পাশে থাকতে হবে, ক্ষেতমজুরের পাশে থাকতে হবে। তাহলেই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘‘আমরা জানতাম এই সরকার শ্রেণীগতভাবে লুটেরা ও ধনিকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করবে। সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষা করবে। তার পরও ইউনূস সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি, আপনাদের কাজ হলো দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এটাই এ সরকারে প্রধান ও মুখ্য কাজ। কিন্তু এই সরকার বিভিন্ন রকম সংস্কারের বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে। তারা ১২টি সংস্কার কমিশন করেছে। কিন্তু আমার কৃষি সংস্কার, শিক্ষা সংস্কার, স্বাস্থ্য সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে তাদের কোনো কাজ বা বক্তব্য নাই।’’
সিপিবির কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আবদুর রহমান রুমীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক হাসিনুর রহমান রুশো, জেলা সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ডা.
ঢাকা/রুমন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ ত থ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর সেমিনার
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের করা তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশের ওপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন:
শাকসুর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা
শাকসুর রোডম্যাপের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এবং সহযোগিতায় ছিলেন ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরস অফিস (ইউএনআরসিও)।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন, রাজনৈতিক অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক ও অধ্যাপক ড. দিলারা রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিসার জাহিদুল হোসেন।
তিনি বলেন, “ইউএন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মোট ৪৩টি সুপারিশ করেছি। এ সুপারিশগুলো সবার পড়া উচিত। পহেলা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যা ঘটেছে, জাতিসংঘ সেটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এই আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ে করছি, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক। রাষ্ট্র হলো শরীর, আর ছাত্ররা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের দুই ধরনের অপরাধ আছে— দেওয়ানী ও ফৌজদারি। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সংঘাত মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, কিন্তু রাষ্ট্র যখন জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালায়, তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে। রাষ্ট্র যদি কোনো সিস্টেমকে দমন বা হরণ করে, তখন তা মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়।”
জাহিদুল হোসেন আরও বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হেলমেট বাহিনী যে সহিংসতা ঘটিয়েছে, তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, কারণ রাষ্ট্র তাদেরকে সহযোগিতা দিয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট আকাশ থেকে পড়েনি—বাংলাদেশে যা ঘটেছে, সেটিই এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই এই রিপোর্ট সবাইকে পড়া উচিত।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে এক অদ্ভুত ধরনের সরকারের বিরুদ্ধে এই বিপ্লব হয়েছিল— আয়নাঘর সরকার, রাতের ভোটের সরকার। যারা এ সরকারের পতনে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। জুলাই চেতনা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। শেখ হাসিনার ভুয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকার জনগণের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।”
এছাড়া অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবে শহীদ নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান তুরাবের বড় ভাই আবদুল জাবের উপস্থিত থেকে স্মৃতিচারণ ও বক্তব্য রাখেন।
সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টভিত্তিক প্রকাশনা, মানবাধিকার সংক্রান্ত বই, নীতিমালা ও স্মারক টি-শার্ট বিতরণ করা হয়।
ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী