বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে রেকর্ড
Published: 6th, September 2025 GMT
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ কর্মসূচি-২০২৫-এ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান ও চাল সংগৃহীত হয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট সমাপ্ত বোরো সংগ্রহ অভিযানে সরকারি লক্ষ্য ১৮ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৩ লাখ ৭৬,৯৪২ মেট্রিক টন ধান, ১৪ লাখ ৬৫৩৩ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৫১,৩০৭ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এর ফলে সমগ্র সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ১,৮৩৪,৭৮২ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্য অতিক্রম করেছে।
আরো পড়ুন:
মহানবীর (সা.
‘আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না, নির্বাচন দিয়ে চলে যান’
সরকারি বোরো সংগ্রহের জন্য ধান, সিদ্ধ চাল ও আতপ চালের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল যথাক্রমে ৩,৫০,০০০ও ১৪,০০,০০০ এবং ৫০,০০০ মেট্রিক টন। শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী: ধান: ৩৭৬,৯৪২ মেট্রিক টন, সিদ্ধ চাল: ১,৪০৬,৫৩৩ মেট্রিক টন আতপ চাল: ৫১,৩০৭ মেট্রিক টন।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রথমত, অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ বাজার স্থিতিশীল রাখে। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, সরকারের হাতে যত বেশি মজুত থাকবে, তারা তত বেশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস এবং অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এর ফলে দর নিয়ন্ত্রণে সহায়তা হয়, এবং দরপতন বা মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলা সহজ হয়।
দ্বিতীয়ত, সময়মতো সংগ্রহ আমদানির চাপ কমায়। বিদেশ থেকে অতিরিক্ত আমদানির প্রয়োজন না হওয়ায় বড় অর্থনৈতিক ব্যয়ও কমে। বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের কারণে সরকারকে এবার প্রচুর আমদানি নির্ভর হতে হয়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সংগ্রহ কেন্দ্রে নির্ধারিত মূল্য মেনে কৃষকরা তাদের ধান-চাল বিক্রি করেছেন। ফলে বাজার দরে বিক্রি করার ঝুঁকি কমেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা এ এম ইমদাদুল ইসলাম বলেন, “সরকারি সংগ্রহ অভিযানে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। এই সাফল্যের ফলে খাদ্য মজুত আরো শক্তিশালী হয়েছে।
জেলা ও বিভাগওয়ারী সংগ্রহের চিত্র
সরকারি বোরো সংগ্রহ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নয়, জেলা ও বিভাগওয়ারী লক্ষ্যও অতিক্রম করেছে। রাজশাহী বিভাগ: ধান সংগ্রহের হার ১০৪–১৯৪%, সিদ্ধ চাল ৯৪–৯৯%, মোট ১২৯% অর্জন। রংপুর বিভাগ: ধান ১০০–১৫৩%, সিদ্ধ চাল ৯৭–১১৯%, মোট ১০৬% অর্জন।
খুলনা বিভাগ: ধান ৮৫–১২৩%, সিদ্ধ চাল ১০০–১০৫%, মোট ১০৬% অর্জন। বরিশাল বিভাগ: ধান ১০০–৩৪৩%, সিদ্ধ চাল ১০২–১৫৯%, মোট ১০৬% অর্জন। সিলেট বিভাগ: ধান ১০৩–১৪০%, সিদ্ধ চাল ১০০–১১৬%, আতপ চাল ১০৬–১৫১%, মোট ১৫১% অর্জন।
ঢাকা বিভাগ: ধান ১৭–১০৭%, সিদ্ধ চাল ৯৪–১০০%, মোট ৯৬% অর্জন।
ময়মনসিংহ বিভাগ: ধান ৯১–৯৬%, সিদ্ধ চাল ৯৭–১০৩%, মোট ৯৭% অর্জন।
চট্টগ্রাম বিভাগ: ধান ৫৯–৮৫%, সিদ্ধ চাল ১০০–১৩০%, আতপ চাল ৯৭–১১৬%, মোট ১৩৯% অর্জন। এই জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, সংগ্রহের কার্যক্রম সব বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার সমান বা তার চেয়ে বেশি।
বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বিতরণ
সরকারি মজুতগুলি ওএমএস, সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প এবং জরুরি পরিস্থিতিতে রেশন বিতরণের জন্য ব্যবহার করা হবে। এর মাধ্যমে বাজারে দরবৃদ্ধি রোধ, নিম্ন আয়ের পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ক্রয়মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সংগ্রহকৃত চাল-ধানের মান ও সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও সতর্কবার্তা
যদিও সংগ্রহ সফল হয়েছে, কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। গুদাম ব্যবস্থাপনা ও ভান্ডার রক্ষণাবেক্ষণ সঠিক না হলে দীর্ঘমেয়াদে লোকসান হতে পারে। অতিরিক্ত সরবরাহ করলে ক্ষুদ্র চাষী বা ব্যবসায়ীর আয় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাজারে দর নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থির নীতি ও স্বচ্ছ সময়সূচি অপরিহার্য।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “খাদ্য মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে। মজুতে থাকা চাল-চালান নিয়মিত যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং টার্গেট বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি কৃষক সচেতনতা, সার-বীজ সরবরাহ ও কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে।”
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা এ এম ইমদাদুল ইসলাম বলেন, “বোরো মৌসুমে সময়মতো ও লক্ষ্যমাত্রার উপরে সরকারি সংগ্রহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে শক্ত করতে সহায়ক। কৃষক, নীতিনির্ধারক ও বাজার-অভিযন্ত্ররা মিলে যদি মজুতের মান রক্ষা, কার্যকর বিতরণ ও স্বচ্ছ বাজার নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে সামনের সময়ে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়পক্ষেই উপকার হবে। সরকারি বোরো সংগ্রহ অভিযান ২০২৫-এর এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, সময়মতো অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করা সম্ভব। এবার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই মজুতকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে দর নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকের মুনাফা নিশ্চিত করা।”
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “সারা দেশে সামগ্রিকভাবে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুত রয়েছে। আমরা পোর্টেবল অবস্থায় আছি।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ষ মন ত র ম ট র ক টন ন শ চ ত কর স গ রহ র আতপ চ ল র জন য লক ষ য সরক র ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।