ডাকসু জরিপ: প্রধান তিন পদে জিতবে শিবির
Published: 6th, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রধান তিন প্রার্থী জিতবে।
শিবির মনোনীত সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম পাবেন ৪১.৯ ভাগ ভোট, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী এসএম ফরহাদ পাবেন ৩২.১ ভাগ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন খান পাবেন ৫২.
আরো পড়ুন:
একটি গোষ্ঠী মুক্ত মত প্রকাশের বিপরীতে গিয়ে ঘৃণা ছড়াচ্ছে: শিপন
ডাকসু: স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিদের ৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা
‘ন্যারেটিভ’ নামে একটি সংগঠনের প্রাক-নির্বাচনী জরিপের ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করে সংগঠনটি।
জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের মধ্যে রয়েছে- ভোট দিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৯৪.৮ ভাগ এবং বাকি ৫.১৮ ভাগ আগ্রহী না। ভিপি পদে কাকে ভোট দেবেন তা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ২৪.৭ ভাগ এবং বাকি ৭৫.৩ ভাগ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিপি পদে শামীম হোসেনের (স্বতন্ত্র) পক্ষে ১৬.৫ ভাগ, আবু সাদিক কায়েমের (শিবির) পক্ষে ৪১.০৯ ভাগ, আবিদুল ইসলাম খানের (ছাত্রদল) পক্ষে ১৩.০৯ ভাগ এবং উমামা ফাতেমার (স্বতন্ত্র) পক্ষে ৮.৮ ভাগ ভোট দেবেন।
ফলাফলে আরো জানা গেছে- সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে কাকে ভোট দেবেন তা ঠিক করেছেন ৬৬.১ ভাগ শিক্ষার্থী এবং ৩৩.৯ ভাগ শিক্ষার্থী এখনো ঠিক করেননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরাফাত চৌধুরীর (স্বতন্ত্র) পক্ষে মতামত দিয়েছেন ১৬.১ ভাগ, মেঘমল্লার বসুর (বাম) পক্ষে ৯.১২ ভাগ, এসএম ফরহাদের (শিবির) পক্ষে ৩২.১ ভাগ, তানভীর বারি হামিমের (ছাত্রদল) পক্ষে ১৬.১ ভাগ এবং আবু বাকের মজুমদারের (বাগছাস) পক্ষে ১৩.৭ ভাগ রয়েছেন।
এছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে এখনো মনঃস্থির করেননি ৪০.৮ ভাগ শিক্ষার্থী। মনঃস্থির করেছেন এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এজিএস পদে তানভীর আল হাদি মায়েদের (ছাত্রদল) পক্ষে মতামত দিয়েছেন ১৫.৯ ভাগ, মহিউদ্দিন খানের (শিবির) পক্ষে ৫২.৯ ভাগ, আশরেফা খাতুনের (বাগছাস) পক্ষে ৯.৪৯ ভাগ এবং জাবির আহমেদ জুবেলের (বাম) পক্ষে ৪.০৭ ভাগ রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ‘ন্যারেটিভ' এর প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ রুহেল।
তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে জরিপে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী পরিষদ এগিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। তবে যেহেতু এটি কেবল আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে করা হয়েছে, বিপুল সংখ্যক অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মতামত এখানে প্রতিফলিত হয়নি।”
জরিপের পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “গত ৩০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা জরিপে আমরা মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচন ও টপ-থ্রি পজিশন নিয়ে কে কি ভাবছেন তা জানতে চেয়েছি। এই অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আমরা সর্বমোট ১৪টি হল (চারটি মেয়েদের ও ১০টি ছেলেদের) থেকে ৫২০টি স্যাম্পল নিয়েছিলাম। প্রত্যেক হল থেকে ৪০ টি করে ডেটা সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। তবে গড়ে ৩৮টির মতো ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের স্যাম্পলিং ছিল স্ট্রার্টিফাইড র্যান্ডম এবং আমরা সরাসরি হলগুলোতে গিয়ে ডেটা সংগ্রহ করেছি, যাতে সিলেকশন বায়াস না থাকে। ডেটা বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে আমরা একদম প্রফেশনাল হেল্প নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে, মোট ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন, তাদের সংখ্যা বের করা হয়েছে। এরপর প্রতিটি পদের জন্য যারা নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন, তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
রুহেল বলেন, “এই ভোটারদের মধ্য থেকে যে পাঁচজন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন, তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। বাকি সব প্রার্থীকে ‘অন্যান্য’ নামে একটি গ্রুপে রাখা হয়েছে। এরপর প্রাপ্ত ভোটকে মোট নির্ধারিত ভোটের শতকরা হিসাবে গণনা করা হয়েছে।”
রুহেল আরো বলেন, “লিঙ্গ, হল, বিভাগ ও প্রত্যাশা অনুযায়ী বিশ্লেষণ করার জন্য প্রতিটি শ্রেণি (যেমন- পুরুষ, নারী, প্রতিটি হল, প্রতিটি বিভাগ এবং প্রত্যাশা) থেকে দেওয়া ভোটকে ১০০ শতাংশ ধরা হয়েছে। এরপর প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট এই শ্রেণিগুলোর মধ্যে কত শতাংশ, তা হিসাব করা হয়েছে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বতন ত র স থ র কর কর ছ ন ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’