মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার হাজারো কৃষক শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনে জমিতে সময় দিচ্ছেন। সিংগাইর, সাটুরিয়া ও সদর উপজেলার কৃষকদের মাঠে তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, করলা, লাউ, মুলা, শসা, পটল, লালশাক ও পালংশাকসহ নানা জাতের সবজির বীজতলা তৈরি ও চারা পরিচর্যায় দিনরাত কাজ করছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, মৌসুম শুরুর আগেই সবজির আবাদ শুরু করতে পারলে বাজারে আগাম সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয়। ফলে একদিকে যেমন ভোক্তাদের চাহিদা মেটে, তেমনি কৃষকরা ন্যায্য দাম পান। কম খরচে বেশি লাভের আশায় অনেকে আগাম জাতের সবজি চাষে ঝুঁকছেন। আগাম ফসলের জন্য সার, কীটনাশক ও শ্রমিক ব্যয় কিছুটা বাড়লেও বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা যায় বলে কৃষকরা লাভবান হন। তারা জানান, প্রতিবছর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় সবজি সরবরাহ করা হয়। 

আরো পড়ুন:

সস্ত্রীক ছিনতাইকারীর কবলে ফেনী স্টেশন মাস্টার, গ্রেপ্তার ৩

কিশোরগঞ্জে বেড়েছে শীতের তীব্রতা

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগাম ও মৌসুমি আবাদ মিলিয়ে সবজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্ভব হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত খরিপ-২ মৌসুমে জেলায় সবজির আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে। ওই সময়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫২ হাজার ১৫৫ মেট্রিক টন, যেখানে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৯৪৯ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে সবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা জমি চাষ, বীজতলা তৈরি ও চারা উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছেন।

সাটুরিয়া উপজেলার পারতিল্লি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ জমিতে হালচাষ করছেন, কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত, আবার কেউ পোকামাকড় দমনে কাজ করছেন। শীতকালীন চাষাবাদের নানা ধাপে কৃষকরা নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‍এ বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও অন্যান্য সবজি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে এক বিঘা জমিতে আটটি বেডে চারা উৎপাদন করেছেন। এখন বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণের কাজ করছেন।

একই এলাকার কলেজপড়ুয়া যুবক আবু বকর জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি কৃষিকাজেও যুক্ত আছেন। এ মৌসুমে ফুলকপি ও বেগুনের চারা উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করেছেন। বীজতলায় নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে গাছের যত্ন নিচ্ছেন তিনি।

গোলড়া এলাকার কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, “আগাম চাষে একদিকে যেমন বাজারে দ্রুত ফসল তোলা যায়, তেমনি অন্য সময়ের তুলনায় দামও ভালো পাওয়া যায়। পরিবারে সচ্ছলতা আসে, বাড়তি খরচ সামাল দেওয়া সহজ হয়।” 

তিনি জানান, মাঝে মাঝে বীজ, সার, কীটনাশক এবং শ্রম ব্যয়ের চাপ তাদের ভোগায়। এ কারণে সরকারি সহায়তা এবং সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পাওয়ার দাবি জানান তিনি।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.

বরীআহ নূর আহমেদ বলেন, “শীতকালীন সবজি আগাম উৎপাদন হলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দামও স্থিতিশীল থাকবে। ফলে ভোক্তারা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরাও লাভবান হবেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।” 

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল ম ন কগঞ জ ক ষকর করছ ন ব জতল সবজ র

এছাড়াও পড়ুন:

৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।

মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।

সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়ন

টিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।

উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।

বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান

অবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’

হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।

জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’

জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।

চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’  

হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • ৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে