জাকসু নির্বাচ: ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
Published: 7th, September 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এটাকে অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত দাবি করে প্রার্থিতা ফেরত চেয়েছেন প্যানেলের প্রার্থীরা।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের নেতারা এ দাবি করেন।
আরো পড়ুন:
কমছে প্রাথমিকের ছুটি
রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা
তারা অভিযোগ করে বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আটদিন পর প্রার্থিতা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত অবৈধ, নিয়মবহির্ভূত ও ষড়যন্ত্রমূলক। এর পিছনে ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, ২০২৩ সালে শেখ মুজিবের গ্রাফিতি মোছায় অমর্ত্য রায়কে বহিষ্কারের দাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা এনামের অনশনের সঙ্গে সংহতি জ্ঞপন করেন জাকসু ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী। তাই অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিলের ক্ষেত্রে তাদের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেন তারা।
প্যানেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রথমে প্রকাশিত ভোটার তালিকা (১৭ আগস্ট) ও পরবর্তী হালনাগাদ তালিকায় (২৯ আগস্ট) অমর্ত্য রায়ের নাম ছিল। এমনকি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাতেও তার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎ প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এটা প্রশাসনের স্পষ্ট জালিয়াতি।
আরো বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি গ্রাফিতি মোছার অভিযোগে অমর্ত্য রায়কে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও একই বছরের মার্চে হাইকোর্ট তাকে কেবল ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়, তবে ক্লাস ও ল্যাব পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর ফলে কিছু কোর্সে তিনি অকৃতকার্য হন।
ওই বহিষ্কারাদেশের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি নিয়মিতভাবে পড়াশোনা চালিয়ে আসছেন, তাই প্রার্থীতা বাতিলের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। প্রশাসন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে প্রার্থীতা বাতিলের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী সমাজ ও ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
তাদের দাবি, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে। এমনকি উপাচার্যের পূর্বের এক মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এনে তারা বলেন, প্রশাসনের অনীহা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
প্যানেল নেতারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনগত লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নির্বাচন কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপনে তার প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অমর ত য র
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি