ঢাকায় জব্দ মাদক ‘কিটামিন’, গন্তব্য ছিল ইতালি
Published: 7th, September 2025 GMT
রাজধানীর টঙ্গী থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইতালিতে পাচারের সময় সাড়ে ৬ কেজি মাদক ‘কিটামিন’ জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। জব্দকৃত মাদকদ্রব্য বিশেষ কায়দায় তোয়ালের ভেতরে দ্রবীভূত অবস্থায় রাখা ছিল। এ ঘটনায় চাঁদপুর ও ফরিদপুর থেকে ২ জনকে গ্রেপ্তার করে সংস্থাটি।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক হাসান মারুফ।
আরো পড়ুন:
জাবিতে গাঁজা সেবনকালে বহিরাগতসহ ৩ শিক্ষার্থী আটক
কালীগঞ্জে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার দুইজনকে কারাগারে প্রেরণ
ডিএনসি মহাপরিচালক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মাদকচক্র কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে পাচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারির অংশ হিসেবে টঙ্গীর ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে অভিযান চালানো হয়। ফেডেক্স কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ঢাকা থেকে ইতালাগামী একটি পার্সেল জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, অস্বাভাবিক ওজন এবং সন্দেহজনক অবস্থার কারণে পার্সেলটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, একটি খাকি রংয়ের কার্টনের ভেতরে সাতটি সাদা তোয়ালে রাখা। ডিএনসির রাসায়নিক পরীক্ষক ঘটনাস্থলেই পরীক্ষা চালিয়ে তোয়ালের ভেতর থেকে দ্রবীভূত অবস্থায় ৬.
জব্দকৃত পার্সেলের প্রেরকের ঠিকানা, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে চাঁদপুরের মতলব উত্তর এলাকা থেকে প্রেরক মো. মাসুদুর রহমান জিলানীকে (২৮) গ্রেপ্তর করা হয়। পরে অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চালান ফরিদপুরের মো. আরিফুর রহমান খোকার (৪৩) সহযোগিতায় বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছিল।
এরপর ডিএনসির একটি অভিযানিক দল ফরিদপুরের সালথা থানার আটঘর বাজার থেকে খোকাকে গ্রেপ্তর করে। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি অ্যান্ড্রয়েড ও একটি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও কুরিয়ারের মাধ্যমে কিটামিন পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে ডিএনসি।
ডিএনসি জানিয়েছে, পাচারকারীরা কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশন পদ্ধতিতে তোয়ালে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকিয়ে ফেলে। এতে কাপড়টি দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে মাদক মিশে থাকে। পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেসের মাধ্যমে কাপড় থেকে মাদক আলাদা করা হয়।
ডিএনসি জানিয়েছে, কিটামিন মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ, যা একসময় অস্ত্রোপচারের আগে রোগেীকে অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি পার্টি ড্রাগ হিসেবে অপব্যবহার হচ্ছে। কিটামিন স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, মূত্রথলি ও মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। নিয়মিত সেবনে এটি জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ায়।
ডিএনসি মহাপরিচালক হাসান মারুফ জানান, এই চক্রের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ঢাকায় তাদের কোনো সদস্য অবস্থান করে না। তারা মাদক সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এবার যে চালানটি জব্দ হয়েছে, তার গন্তব্য ছিল ইতালি।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
ডিএনসি মহাপরিচালক বলেন, “বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাদকপাচারের রুট কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে প্রতিটি দেশেই চাহিদার ভিত্তিতে মাদক প্রবেশ করে। ইয়াবার ক্ষেত্রেও আমাদের সীমান্ত এলাকায় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”
জনবল সংকটের কারণে গোয়েন্দা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা রয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “সারা বাংলাদেশে অপারেশন ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে মাত্র ১ হাজার ৬২২ জন কাজ করছেন। সীমিত জনবল দিয়েই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। গত ছয় মাসে আমাদের অভিযান সংখ্যা বেড়েছে।”
মাদক থেকে দূরে রাখতে সন্তানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ডিএনসি মহাপরিচালক।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এনস অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।
হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।
যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।