গোবিপ্রবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সনদ তুলতে বাঁধা দেওয়ার অ
Published: 8th, September 2025 GMT
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) ফলাফল ও সনদ তুলতে বাঁধা দেওয়ায় প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিবের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফার্মেসী বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আতিক ফয়সাল।
সোমবার (৮ সেড্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়লে প্রশাসনের ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় তার সহপাঠীরা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থী ও তার মায়ের হত্যা’র বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
ডাকসু নির্বাচন: পৃথক ২ জরিপে ছাত্রদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এগিয়ে
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আতিক ফয়সাল বলেন, “গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্নাতকের ফলাফল প্রকাশ হয়। ফলাফল তুলতে গেলে প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিবের বাঁধা প্রদানের সম্মুখীন হই। এরপর সনদপত্র উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের ২৭ আগস্ট আমি প্রক্টর অফিসে ফর্ম জমা দিই। একইসঙ্গে আমার দুই সহপাঠীর ফর্মও জমা ছিল। কিন্তু পরে দেখি তাদের ফর্মে স্বাক্ষর হলেও আমার ফর্মে কোনো স্বাক্ষর হয়নি।”
তিনি বলেন, “অফিস থেকে জানানো হয়, প্রক্টর নিজে আমার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আমি বারবার প্রক্টর স্যারের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো উত্তর দেননি। ফলে দিনের পর দিন আমার ফর্ম প্রক্টরের কাছে আটকে আছে এবং পরীক্ষার সনদ ভুলতে পারিনি। আমার একটি চাকরির জন্য সিভি ও সনদের কপি পাঠানোর কথা থাকলেও আমি তা পারিনি। রেজাল্ট আটকে রাখার মতো নির্মম, নিষ্ঠুর ও মানবতাবিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন তিনি।”
তিনি আরো বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর আবেদন করলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ বা ব্যাখ্যা পাইনি। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি কখনো কোনো শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হইনি, যার জন্য আমাকে ইতোমধ্যে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি শৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সদস্য আমাকে জানিয়েছেন, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডেও আমার বিষয়ে কোনো শাস্তি গ্রহণের সিদ্ধান্তও হয়নি।”
ভুক্তভোগী বলেন, “কোনো অবস্থাতেই আমার সনদ আটকে রাখা বা প্রযোজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর না করার নূন্যতম কোনো কারণ নেই। এখানে আরো বলে রাখা ভালো, যদি সর্বশেষ শৃঙ্খলা বোর্ডে কিংবা যেকোনো সমযে আমার বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও থাকে, তা পূর্ববর্তী কিছুর সঙ্গে এপ্লাই করার নূন্যতম কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ আমাকে যদি আজ বহিষ্কার করা হয়, তা পরবর্তী সেমিস্টার থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু পূর্ববর্তী পরীক্ষার সনদে সেটি এপ্লাই করার সুযোগ নেই। এমনকি ছাত্রত্ব বাতিলের মতো বিষয়ও যদি আসে, সে ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবার এক সেকেন্ড আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আইনগতভাবে আমার সনদ আটকে রাখার সুযোগ নেই।”
ভুক্তভোগী আরো বলেন, “আমি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলাম এবং এ কাজের জন্য সে সময় থেকে আমার বিষয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজনের মেসেজও জুলাই আন্দোলনের সময় ফাঁস হয়, যারা আমাকে দেখে নিতে চান। আমি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা হিসেবে একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করেছি। সে সময় প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সরব ছিলাম। সাম্প্রতিক হল ও একাডেমিক ভবনে ভাঙচুর নিয়েও প্রশাসনের গাফিলতি নিয়েও আমি সোচ্চার ছিলাম। ৩ কার্যদিবসে বিচার করতে চেয়ে ৩০ দিন পার হয়ে গেলেও বিচার দেখতে পাইনি। সেটি নিয়ে আমার মাথাব্যথাও নেই।”
“কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে ভাঙচুর, রক্তাক্ত করার ঘটনা, একাডেমিক ভবনে ভাঙচুর, বিভাগে ভাঙচুর, হলে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীর জিনিসপত্র বের করে অগ্নিসংযোগ, হত্যাচেষ্টা, মবসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও এমন গুরুতর কোনো বিষয়ে আমার নাম কোথাও নেই, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। অথচ এসব ঘটনায় জড়িতরা নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ালেও আমার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে,” যুক্ত করেন ভুক্তভোগী।
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, “আমার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রশাসনিকভাবে সনদ উত্তোলনের ফর্ম আটকে রাখা হচ্ছে, যা চরম হয়রানিমূলক। শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরেও এভাবে পূর্ববর্তী পরীক্ষার সনদ কি আটকে রাখতে পারে? আমি এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দ্রুত আমার ন্যায্য অধিকার, অর্থাৎ অনার্স সনদপত্র উত্তোলনের সুযোগ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেন এমন হয়রানির স্বীকার না হতে হয় এবং এ ধরনের হয়রানি, জুলুম ও বৈষম্যমূলক আচরণ যেন প্রশাসন থেকে কেউ না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যাল্যয়ের প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিবের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
ঢাকা/বাদল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য ল র ফর ম আম র ব র জন য র সনদ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’