চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবাধে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত
Published: 8th, September 2025 GMT
পাটজাত বস্তায় চাল বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালকল মালিকরা। আইন অমান্য করে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত করছেন তারা। এতে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা বেড়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে দায় সারছে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাটের বস্তায় চাল বাজারজাত করলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে, তেমন কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে পাট চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হবে।
আরো পড়ুন:
যুবদল নেতার গুদাম থেকে সাড়ে ১০ টন চাল জব্দ
৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
২০১০ সালে ৭ অক্টোবর ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন’- করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এতে ধান ও চাল বিপণনে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এই আইন প্রণয়নের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেমন প্রয়োগ নেই। অথচ এ জেলার দুই শতাধিক চালকলে দৈনিক হাজার-হাজার মেট্রিক টন চাল বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ৮৬টি স্বয়ংক্রীয় চালকল (অটো রাইসমিল), ২০টি বয়েল আর বাকিগুলো আতব চালের কল। এ সব চালকলে দৈনিক গড়ে ১৭ হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদন করে বস্তায় মোড়কীকরণ করা হয়। পরে এই চাল বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন বাজারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ রাইস মিলে চালের মোড়কীকরণে প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার হচ্ছে। কয়েকটি চালকলে কিছু পাটের বস্তায় চাল বাজারজাত করতে দেখা গেছে। জেলা পাট উন্নয়ন অফিসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৫ মাসে প্লাস্টিক বস্তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাত্র ৯টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ১০টি মামলায় ৭৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বড় বড় চালকল মালিকদের ছেড়ে ছোট চালকল মালিকদের প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানের পাশাপাশি পণ্যে পাটজাত মোড়ক বিষয়ে প্রচারণা চালিয়েছে বলে দাবি করছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। যদিও পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার এমন দাবি দৃশ্যমান নয়।
চালকল মালিকরা সরাসরি এ সব বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়। তবে তাদের দাবি প্যাকেজিং খরচ কমাতে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালকল মালিক জানান, ৫০ কেজির একটি পাটের বস্তার দাম রকমভেদে ৫০ থেকে ৫৭ টাকা। সেখানে সর্বোচ্চ ২৫-৩০ টাকায় একটি প্লাস্টিকের বস্তা পাওয়া যায়। সেই কারণে ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রি করছেন।
প্লাস্টিকে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, ‘‘প্লাস্টিক পরিবেশ এবং জীবজগতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক হাজার বছর ধরে পরিবেশে থেকে মাটি ও পানি দূষিত করে। এটি সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন কেড়ে নেয়।’’
প্লাস্টিকে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে উল্লেখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা.
অভিযোগের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা অতিরিক্ত পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অজিত কুমার রায় বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত আইনের লঙ্ঘন। এসবের বিরুদ্ধে প্রতি মাসেই বিভিন্ন চালকলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আগের তুলনায় আমাদের অভিযান বেড়েছে।’’
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, ‘‘অভিযান না করার জন্য মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন কারণে আমাদের নির্দেশনাও আসে। অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা যে স্বাধীন; তাও না। আমাদের কিছু প্রতিবদ্ধকতাও আছে। এর মধ্যেও আমরা চালকলে প্লাস্টিকের বস্তাবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে এ সব ভিত্তিহীন।’’
প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে চালকল মালিকদের বেশি খরচের অজুহাতের বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘চালকল মালিকরা খরচের যে অজুহাত তুলছেন, এটা খুবই অযৌক্তিক। কারণ পাটের বস্তার ওজন ৩৬০ গ্রামসহ ৫০ কেজির বস্তা প্যাকিং করে বাজারজাত করা হয়। এতে চালকল মালিকদের তেমন আর্থিক ক্ষতি হয় না।’’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রির বিরুদ্ধে আমরা অভিযানে যাব। এর আগেও চালকল মালিকদের অনেক বোঝানো হয়েছে, এবারও তাই করা হবে। এতেও তারা আইন মানতে নারাজ হলে আমরা অভিযান চালাব। এমন অভিযান দু-এক দিনের মধ্যে শুরু হতে পারে।’’
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ র চ লকল ম ল ক প ট র বস ত আম দ র বস ত র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
বাহরাইনের প্রতি বাংলাদেশিদের জন্যে ভিসা চালুর অনুরোধ
ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকসহ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সুবিধা পুনরায় চালু করতে বাহরাইনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
উপদেষ্টা দু’দেশের জনগণের সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ভিসা পুনরায় চালুর এ অনুরোধ জানান।
বাহরাইনে ২১তম আইআইএসএস মানামা সংলাপের ফাঁকে শনিবার (১ নভেম্বর) দেশটির উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন খালিফা আল ফাদেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এ সময়ে ভিসা পুনরায় চালুর অনুরোধটি জানান উপদেষ্টা।
রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে তৌহিদ হোসেন কমিউনিটির কল্যাণ নিশ্চিত এবং সামাজিক সম্পর্ক মজবুতের লক্ষ্যে বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘ফ্যামিলি ভিসা’ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করারও অনুরোধ জানান।
বাহরাইনের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির অর্থনীতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, তার দেশের সরকার ধাপে ধাপে ভিসা সুবিধা পুনরায় চালুর জন্য কাজ করছে।
বৈঠকে উভয়ে দু’দেশের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তরে একটি চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
তৌহিদ হোসেন ২১তম মানামা সংলাপের অধিবেশনের পাশপাশি আরো কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এসব আয়োজনে বিশ্ব নেতা, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নীতি নির্ধারকরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবেন।
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/ইভা