ফরিদপুর বিভাগে যেতে চায় না শরীয়তপুরবাসী, মানববন্ধন-বিক্ষোভ
Published: 8th, September 2025 GMT
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে নয় বরং ঢাকা বিভাগে থাকার দাবি জানিয়েছে শরীয়তপুরবাসী।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে শরীয়তপুর জেলা শহরের চৌরাঙ্গী এলাকায় ঢাকা বিভাগে থাকার দাবিতে ‘জাগো শরীয়তপুর’ নামে সংগঠনের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থী ও তার মায়ের হত্যা’র বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
চাটমোহরে মাদ্রাসার সুপারকে স্থায়ী বরখাস্তের দাবি
বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর তারা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘‘সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারি, পদ্মা ও মেঘনা নামে বিভাগ হচ্ছে না। কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার জন্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার)-এর সভায় কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।’’
বক্তারা আরো বলেন, ‘‘ভৌগোলিক দিক থেকে শরীয়তপুর থেকে ফরিদপুরের তুলনায় ঢাকার দূরত্ব কম। তাছাড়া শরীয়তপুরের সঙ্গে ঢাকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। পদ্মা সেতুর চালুর পর থেকে সেগুলো আরো সহজতর হয়েছে। তাই শরীয়তপুরবাসী কোনোভাবেই ফরিদপুর বিভাগে যেতে চাচ্ছে না।’’ শরীয়তপুর জেলাকে ঢাকা বিভাগ থেকে আলাদা করার চেষ্টা করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন বিক্ষোভকারীরা।
জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এইচ এম জাকির বলেন, ‘‘আমরা এরই মধ্যে জানতে পেরেছি, ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণার চেষ্টা হচ্ছে। শরীয়তপুর জেলাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে রাখতে চাচ্ছে। তবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিভাগের সঙ্গে রয়েছি, তাই কোনোভাবেই আমরা ফরিদপুর বিভাগে যাব না।’’ যদি শরীয়তপুরবাসীর দাবি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
জাগো শরীয়তপুরের আহ্বায়ক আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, ‘‘আমরা কয়েকটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছি, সরকারের নিকার সভায় প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত চলমান রয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের মূল দপ্তরগুলো ঢাকা বিভাগে। গত সরকার ফরিদপুর বিভাগ তৈরি করার প্রহসনের মাধ্যমে অনেক দপ্তর গোপালগঞ্জে নিয়ে গিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই ফরিদপুর বিভাগে যেতে চাচ্ছি না। আমাদের জেলাবাসীর প্রাণের দাবি আমরা ঢাকা বিভাগের সঙ্গেই থাকব।’’
জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’’
আন্দোলনকারীরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেও সেই সময়সীমার পর তারা কী ধরনের কর্মসূচি পালন করবেন, তা প্রশাসনকে জানাননি বলে জানান জেলা প্রশাসক।
ঢাকা/আকাশ/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫