রাকসু: ম্যানুয়াল ভোট গণনাসহ ১২ দাবি ছাত্রদলসহ ২ প্যানেলের
Published: 13th, September 2025 GMT
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার দাবিতে ম্যানুয়াল ভোট গণনাসহ ১২ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে দুইটি প্যানেল।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল ও ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেল এসব দাবি করেন।
আরো পড়ুন:
রাকসু নির্বাচন: শেষ দিনে ছাত্রদল নেতার প্রার্থিতা প্রত্যাহার
রাকসু নির্বাচন: ভিপি-জিএসসহ বিভিন্ন পদে লড়ছেন ৩২ নারী প্রার্থী
সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল দুইটির অভিযোগ, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রশিবির নিয়ম ভেঙে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন উপঢৌকন বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে। এছাড়া ব্যালট নম্বর প্রদানেও তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা স্পষ্ট আচরণবিধি লঙ্ঘন। স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও নির্বাচন কমিশনার লিখিত চেয়েছেন। আমরা বহুবার নিজেদের জায়গা থেকে অভিযোগ করেছি, তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। লিখিত ছাড়া নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যা স্পষ্ট পক্ষপাতমূলক। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা সম্ভব হবে না। আমরা চাই দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত রাকসু নির্বাচন কোনোভাবে যেন কালিমালিপ্ত না হয়।
দুই প্যানেলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ১২ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার এবং ভোট শুরুর আগে সাংবাদিক ও এজেন্টদের উপস্থিতিতে তা উন্মুক্ত করা; ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার নিশ্চিত করা; এক দিনের মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা; ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা; নির্বাচনী খরচ ও পোস্টারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যালট ছাপানো ও বাঁধাইয়ের সময় এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা; পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা করা; ডিজিটাল বোর্ডে ভোটার নাম্বার প্রকাশ করা; সাইবার বুলিং প্রতিরোধে কার্যকর সেল গঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর পেজ-গ্রুপ বন্ধ করা; ভোটের দিন ভোটার তালিকা হাতে ধরিয়ে না দেওয়া।
এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ভোট ম্যানুয়ালি গণনা করার ফলে দুইদিনেও ফলাফল হয়নি, রাবিতে ৩০ হাজার ভোট ম্যানুয়ালি গণনা করা হলে বিশৃঙ্খলা হবে কিনা এমন প্রশ্নের ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে দেখেছি ইভিএম এর মাধ্যমে কিভাবে ভোট কারচুপি করা হয়, রাকসুতেও এমন হতে পারে। এছাড়াও, ইভিএম এ ক্যারিক্যাচার করার মাধ্যমে ভোট কারচুপি হতে পারে। আমরা চাই, প্রশাসন বেশি জনবল নিয়োগ করে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করুক।”
ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, “ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গণনা করা হলে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই, দীর্ঘদিন পর যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, তাই নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। আমরা স্বচ্ছ ভোট বাক্স স্থাপন, ম্যানুয়ালি ভোট গণনাসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই ১২ দফা দাবি জানিয়েছি। ডাকসু ও জাকসুতে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, আমরা চাই না রাকসুতে এই বিতর্ক হোক। ভোটার সংখ্যা বেশি হলে আপনারা জনবল বাড়িয়ে ভোট গণনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি জনবলের অভাব?”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রদল প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা এবং ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আফরিন জাহান ও এজিএস প্রার্থী আল শাহরিয়ার শুভ প্রমুখ।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল ভ ট গণন
এছাড়াও পড়ুন:
নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের শয্যাসংখ্যা ৫২। তবে গত সোমবার হাসপাতালের এই ওয়ার্ডে সাতটি শয্যা খালি দেখা গেছে। একই চিত্র সার্জারি ওয়ার্ডেরও। নগরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেখানে রোগীর চাপ থাকে শয্যার দেড় গুণ, সেখানে জেনারেল হাসপাতালে এই সংখ্যা অর্ধেক। বছরে সাড়ে তিন লাখের মতো রোগী এখানে সেবা নিলেও তাঁদের মাত্র আড়াই শতাংশ ভর্তি হন এখানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত চার বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হন। প্রতি মাসে শয্যা অনুপাতে আবাসিক রোগী ভর্তি গড়ে ৪৭ শতাংশ; অর্থাৎ মোট শয্যার অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এই হার আরও কম; ৩৭ শতাংশ।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এই হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার কারণ জানা গেছে। সেগুলো হলো হাসপাতালের অবস্থান, নিরাপত্তাঝুঁকি, রাতের বেলায় ওষুধ না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাতায়াতব্যবস্থা না থাকা। হাসপাতালটিতে জনবলেরও ঘাটতিও রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় নার্সদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে রোগীরা এখানে থাকতে চান না।
ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। মোহাম্মদ একরাম হোসেন, ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম নগরে সরকারি দুই হাসপাতালের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অন্যটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ২ হাজার ২০০ হলেও প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী থাকেন। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে ১২০ থেকে ১৪০ জন রোগী থাকেন।
রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাঁরা চিকিৎসা নেন, তার অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। দূরের রোগীরা এখানে আসতে চান না। কারণ, পাহাড়ের ওপর হাসপাতালটির অবস্থান। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। রাতে পাহাড়ের পথ ধরে মাদকসেবীরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের পাশে অবস্থান করে। ছিনতাই ও নিরাপত্তাঝুঁকির কারণেই রোগীরা অন্যত্র চলে যান।
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের জন্য ২৫টি শয্যা সংরক্ষিত আছে। এসব শয্যায় অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল ভবন দুটির বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে গেছে। ফাটল ধরেছে কিছু স্থানে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন গুটিকয় নার্স। প্রসূতি বিভাগে নার্সের উপস্থিতি বেশি। সার্জারি বিভাগের পুরুষ ব্লকের অন্তত ৫টি বেড খালি। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। রোগী বেশি মেডিসিন বিভাগে।
হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায়ই অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না।চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান নগরের আন্দরকিল্লা এলাকার রংমহল পাহাড়ের ওপর। এর পেছনের দিকে কাটা পাহাড় লেন। আগে এ সড়ক দিয়েই হাসপাতালে ঢুকতে হতো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ এ পাহাড়ি পথ ধরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢোকে। নিরাপত্তা না থাকায় মাদকসেবীরাও পাহাড়ে ওঠে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ একরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভবন সংস্কারের বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের আওতায়। এ বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩০ জন আনসারের কথা বলা হয়েছে। এটির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন।
শুরুতে এটি কেবল একটি ডিসপেনসারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তবে ১৯০১ সালে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় জেলা সদর হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতাল ১৯৮৬ সালে ৮০ শয্যা এবং পরে ১৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে জনবল থেকে যায় ১০০ শয্যার। সেই পুরোনো জনবল কাঠামোতেই সর্বশেষ ২০১২ সালে হাসপাতালটিতে ২৫০ শয্যার সেবা শুরু হয়। তবে এখনো জনবল সে–ই অর্ধেক।
হাসপাতাল–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা ২৫০টি হলেও এখানে চিকিৎসক ও নার্স আছেন প্রয়োজনের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কনসালট্যান্ট মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ জন চিকিৎসক আছেন। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৬৫ থেকে ৬৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে, যে সংখ্যক রোগী এখানে আসেন, এর জন্য ১০০ জনের বেশি চিকিৎসক প্রয়োজন। নেই পর্যাপ্ত নার্স ও মিডওয়াইফও।
এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমআরআই মেশিন বর্তমানে নষ্ট। ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও প্রায় সময় অচল থাকে। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা। তবে এসবের মধ্য দিয়েই চলছে রোগীর সেবা। মূলত বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংকট সত্ত্বেও বহির্বিভাগের সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন রোগীরা। তবে বিভিন্ন সময় এসে টিকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন রোগী। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭২ জন রোগী। জরুরি সেবা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আমান প্রথম আলোকে বলেন, জনবল স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে রোগীদের পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কথা, তার তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে সেবা চলছে। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হলে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালে বিভিন্ন চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শয্যা বাড়লেও সেখানে পদ বাড়ানো হয়নি। নিরাপত্তার জন্য তাঁদের ৩০ জন আনসার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।