দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার দাবিতে ম্যানুয়াল ভোট গণনাসহ ১২ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে দুইটি প্যানেল।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল ও ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেল এসব দাবি করেন।

আরো পড়ুন:

রাকসু নির্বাচন: শেষ দিনে ছাত্রদল নেতার প্রার্থিতা প্রত্যাহার

রাকসু নির্বাচন: ভিপি-জিএসসহ বিভিন্ন পদে লড়ছেন ৩২ নারী প্রার্থী

সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল দুইটির অভিযোগ, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রশিবির নিয়ম ভেঙে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন উপঢৌকন বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে। এছাড়া ব্যালট নম্বর প্রদানেও তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা স্পষ্ট আচরণবিধি লঙ্ঘন। স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও নির্বাচন কমিশনার লিখিত চেয়েছেন। আমরা বহুবার নিজেদের জায়গা থেকে অভিযোগ করেছি, তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। লিখিত ছাড়া নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যা স্পষ্ট পক্ষপাতমূলক। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করা সম্ভব হবে না। আমরা চাই দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত রাকসু নির্বাচন কোনোভাবে যেন কালিমালিপ্ত না হয়।

দুই প্যানেলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ১২ দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার এবং ভোট শুরুর আগে সাংবাদিক ও এজেন্টদের উপস্থিতিতে তা উন্মুক্ত করা; ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার নিশ্চিত করা; এক দিনের মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা; ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা; নির্বাচনী খরচ ও পোস্টারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যালট ছাপানো ও বাঁধাইয়ের সময় এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা; পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা করা; ডিজিটাল বোর্ডে ভোটার নাম্বার প্রকাশ করা; সাইবার বুলিং প্রতিরোধে কার্যকর সেল গঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর পেজ-গ্রুপ বন্ধ করা; ভোটের দিন ভোটার তালিকা হাতে ধরিয়ে না দেওয়া।

এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ হাজার ভোট ম্যানুয়ালি গণনা করার ফলে দুইদিনেও ফলাফল হয়নি, রাবিতে ৩০ হাজার ভোট ম্যানুয়ালি গণনা করা হলে বিশৃঙ্খলা হবে কিনা এমন প্রশ্নের ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে দেখেছি ইভিএম এর মাধ্যমে কিভাবে ভোট কারচুপি করা হয়, রাকসুতেও এমন হতে পারে। এছাড়াও, ইভিএম এ ক্যারিক্যাচার করার মাধ্যমে ভোট কারচুপি হতে পারে। আমরা চাই, প্রশাসন বেশি জনবল নিয়োগ করে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করুক।”

ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, “ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গণনা করা হলে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই, দীর্ঘদিন পর যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, তাই নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। আমরা স্বচ্ছ ভোট বাক্স স্থাপন, ম্যানুয়ালি ভোট গণনাসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই ১২ দফা দাবি জানিয়েছি। ডাকসু ও জাকসুতে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, আমরা চাই না রাকসুতে এই বিতর্ক হোক। ভোটার সংখ্যা বেশি হলে আপনারা জনবল বাড়িয়ে ভোট গণনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি জনবলের অভাব?”

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রদল প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা এবং ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আফরিন জাহান ও এজিএস প্রার্থী আল শাহরিয়ার শুভ প্রমুখ।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ছ ত রদল ভ ট গণন

এছাড়াও পড়ুন:

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রে ওষুধ নেই, চিকিৎসক নেই, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। ফলে তেমন একটা রোগীও নেই। এই ‘নাই নাই’ হাসপাতালটির নাম মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। এভাবে কি একটা হাসপাতাল চলতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার এমন নমুনা আমাদের হতাশ করে। দেশজুড়ে এ রকম আরও চিত্র আমরা দেখতে পাই, যা আমাদের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা দেয় না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই ১০ শয্যার হাসপাতালটির মূল সমস্যা জনবলসংকট। ১৬টি পদের ১টিতেও স্থায়ী জনবল পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এসে মাত্র তিনজন কর্মচারী (একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ ও একজন আয়া) সপ্তাহে কয়েক দিন করে দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি জরুরি প্রসূতিসেবাকেন্দ্র, যা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ডাক্তার নেই এবং প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এর কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির।

হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় প্রায় তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস ধরে। এ পরিস্থিতিতে একজন রোগী কীভাবে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসবেন? যেখানে হাসপাতালের বাইরের সাইনবোর্ডে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা লেখা, সেখানে মূল ফটকে তালা ঝোলানো। এটি জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। হাসপাতালটি চালু না থাকায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় তো বটেই, চরম ভোগান্তিরও শিকার হতে হয় মানুষকে।

যে মিডওয়াইফরা এখানে কাজ করছেন, তাঁরা জানান, এখন মাসে মাত্র চার-পাঁচজন প্রসূতি সেবা নিতে আসেন, যেখানে আগে শতাধিক প্রসূতি সেবা পেতেন। নিরাপত্তা প্রহরীরা দুই বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। তবু নিয়মিত বেতন পাওয়ার আশায় তাঁরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। এ অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, তাঁরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবলসংকটের কথা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

একটি মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধরনা দিতে হবে? জনবল নিয়োগ, কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, বিদ্যুতের ব্যবস্থা কার্যকর করা—সব ধরনের সংকট দূর করতে হাসপাতালটির দিকে আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া হবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাতে ভোট গণনাসহ ছাত্রদলের ৬ দাবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজর কখন পড়বে
  • যে হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ, বিদ্যুৎ–সংযোগ কিছুই নেই