নাইজেরিয়ায় ১৮ নারী ও শিশুকে অপহরণ
Published: 14th, September 2025 GMT
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে জামফারা রাজ্যের একটি গ্রামে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে একজন পুরুষকে হত্যা করেছে এবং ১৮ জন নারী ও শিশুকে অপহরণ করেছে।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।
স্থানীয় একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, ‘দস্যু’ নামে পরিচিত গবাদি পশু চক্রের আক্রমণকারীরা শুক্রবার ভোরে বিরনিন জারমা গ্রামে হামলা চালায়। এটি এই অঞ্চলে সর্বশেষ সহিংসতার ঘটনা।
জামফারা হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য নাইজেরিয়ার বেশ কয়েকটি রাজ্যের মধ্যে একটি, যেখানে বছরের পর বছর ধরে ডাকাতদের আক্রমণ চলছে।
বিরনিন জারমার বাসিন্দা ইব্রাহিম বেলো বলেন, “স্থানীয় সময় সকাল ৫টার দিকে যখন লোকেরা ফজর নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন দস্যুরা গ্রামে আক্রমণ করে।”
বেলো আরো বলেন, “তারা একটি বাড়িতে ঢুকে একজন পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে এবং তার স্ত্রীকে আহত করে। এছাড়াও তারা ১৮ জন নারী ও শিশুকে অপহরণ করে।”
পার্শ্ববর্তী শহর বুককুয়ুমের বাসিন্দা লাওয়াল উমর হামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “আক্রমণকারীদের পার্শ্ববর্তী আঙ্কা জেলার বাসিন্দা বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে তারা কাছের একটি জঙ্গলে ক্যাম্প স্থাপন করেছে।”
উমর বলেন, “দস্যুরা গারবা গাম্বো নামে এক কৃষককে হত্যা করার পর তার স্ত্রীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রেখে যায় এবং গ্রাম থেকে ১৮ জন নারী ও শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।”
তার মতে, দস্যুদের আক্রমণ থেকে এলাকাকে রক্ষা করার জন্য বুককুয়ুমে মোতায়েন করা সৈন্যরা আক্রমণ প্রতিহত করতে গ্রামে যেতে পারেনি। কারণ কারণ বিরনিন জারমা ও বুককুয়ুমকে পৃথককারী নদী উত্তাল ছিল তখন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে