প্রথম কার্যনির্বাহী সভায় সিনেটে ৫ ছাত্র প্রতিনিধি ঠিক করল ডাকসু
Published: 14th, September 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সভায় সিনেটে ডাকসুর ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি ঠিক করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়সংলগ্ন সভাকক্ষে ডাকসুর প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকসুর কার্যক্রম শুরু হলো। উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
আরো পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচনে জয়ী ৭ নারী
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কবর জিয়ারতে ডাকসু জয়ী শিবির নেতারা
সভায় ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মুহা.
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে ব্রিফ করেন ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ। তিনি বলেন, “সভার শুরুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ফুল দিয়ে উপাচার্য শুভেচ্ছা জানান। তারাও উপাচার্যকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তারা পরস্পর পরিচিত হয়েছেন। ভিপি, ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ ও সবশেষ ডাকসুর সভাপতি হিসেবে উপাচার্য বক্তব্য দেন সভায়। সভায় সিনেটে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি ও ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ কে হবেন, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা গেজেটের মাধ্যমে দ্রুতই প্রকাশ করা হবে।”
এস এম ফরহাদ বলেন, “আজ থেকে তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে যে যেই মতেরই থাকুক না কেন, সবকিছু পেছনে রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে তারা তাদের কণ্ঠস্বর হতে চান। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আগামী এক বছরে কী কী কাজ করবেন, কোন সপ্তাহে কী কাজ করবেন—সেটির পুরো পরিকল্পনা প্রস্তুত করে অল্প সময়ের মধ্যে তারা কাজে নেমে পড়বেন।”
ফরহাদ বলে, “ডাকসুর পক্ষ থেকে সিনেটে ৫ জন প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়ে আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জন প্রতিনিধি কারা হবেন, সে ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তারা। ডাকসু থেকে ভিপি আবু সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদ, এজিএস মুহা. মহিউদ্দীন খান, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ ও সদস্য সাবিকুন্নাহার তামান্না সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন। অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিনিধিদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ হবে বলে আশা রাখছেন তারা।”
ছাত্র প্রতিনিধি ঠিক করার যুক্তি তুলে ধরে এস এম ফরহাদ বলেন, “আগে কীভাবে এ কাজ হয়েছে, সে অভিজ্ঞতা তারা জেনেছেন। সেই আলোকে প্রতিনিধি হিসেবে ভিপি, জিএস, এজিএস থাকছেন। সম্পাদকদের মধ্যে থেকে ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ও সদস্যদের মধ্য থেকে একজন ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটা অংশ অনাবাসিক শিক্ষার্থী। এ কারণে ছাত্র পরিবহন সম্পাদককে রাখা হয়েছে। যাতে তিনি তাদের সমস্যার কথাগুলো তুলে ধরতে পারেন। পাশাপাশি ছাত্রীদের সমস্যা তুলে ধরতে সাবিকুন্নাহার তামান্নাকে রাখা হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/সৌরভ/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ চ র য ঠ ক কর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”
“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”
“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”
‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
ঢাকা/রাসেল