তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বেড়েছে নদীভাঙন। ইতোমধ্যে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে পানি নিষ্কাশনে দেরি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন অনেক মানুষ।  

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৪ মিটার। 

আরো পড়ুন:

ইছামতীর পাড়ের জমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ

যমুনার করালগ্রাসে বাঘুটিয়া চর

এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। 

নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে হঠাৎ পানি বেড়ে যায়। রবিবার দিনভর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ছিল বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে। ফলে, নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার। ভেঙে যায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ডুবে যায় চাষিদের আমন ধানের খেত। বন্যার স্রোতে ভেসে যায় পুকুরের মাছ ও জাগ দেওয়া পাট। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। 

বন্যার্ত এলাকায় টিউবয়েল ও টয়লেট ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা। পুরুষরা শৌচকাজ বাইরে সারতে পারলেও নারীরা পড়েন বিপাকে। বন্যার সময় গবাদি পশু এবং বৃদ্ধ, শিশু ও প্রতিবন্ধী মানুষদের বিপদ বাড়ে। বন্যাদুর্গত এলাকায় সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেড়েছে।

বন্যা শুরুর এক দিন পরে উজানের ঢল কমে যাওয়ায় তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যায়। ফলে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। তবে, পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক এলাকা এখনো প্লাবিত আছে। পানিতে ঘরের কাঁচা বেড়া নষ্ট হয়েছে। কাদা আর ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করেছে ঘরে। পানি নেমে যাওয়ায় ঘর বাড়ি মেরামত নিয়ে ব্যস্ত বন্যার্তরা। 

এদিকে, পানি কমে যাওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন এলাকা। কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পাঠানো ৫০০ জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। তবে, গত দুই দিনে ওই এলাকার পাঁচটি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে শত শত বাড়ি, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অসংখ্য স্থাপনা। 

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা সোবাহান মিয়া বলেছেন, নদীকে তো তার পানি যাবার পথ করে দিতে হবে। কোম্পানি পানি যাবার পথ বন্ধ করে সোলার প্যানেল বসিয়েছে। ফসল-সম্পদ হারাচ্ছি জনগণ, ব্যবসা করছে কোম্পানি। দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেছেন, তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে, নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ বরাদ্দ পেয়েছি। আরো প্রয়োজন রয়েছে। বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নদীপাড় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ঢাকা/সিপন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ব পৎস ম বন য র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ