কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬তম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন (সিসিসি) উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেনা সম্মেলন একটি দ্বিবার্ষিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শীর্ষস্তরীয় মতবিনিময়ের আসর।

অপারেশন সিঁদুরে’র পর এটিই প্রথম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, তিন বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান, প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানও।

আরো পড়ুন:

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

আসামে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ৫ বাংলাদেশি ছাত্রকে বহিষ্কার

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড সদর দপ্তর কলকাতার বিজয় দুর্গে তথা ফোর্ট উইলিয়ামে আগামী তিনদিন এই সম্মিলিত সেনা সম্মেলন চলবে। 

এই সম্মেলন সেনার তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ চিন্তাভাবনামূলক ফোরাম, যা দেশের শীর্ষ অসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বকে ধারণাগত ও কৌশলগত স্তরে মতামত বিনিময়ের জন্য আয়োজন করা হয়েছে ৷ কলকাতার আগে সর্বশেষ সম্মিলিত সেনা সম্মলেন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৩ সালে ভোপালে। অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপটে, এই বছরের সম্মেলন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলনে সংস্কার, রূপান্তর, পরিবর্তন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির উপর জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের  বিবৃতি অনুযায়ী, ‘সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু সশস্ত্র বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সংহতিকরণ এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে বিশেষ জোর দেওয়া। একই সঙ্গে শীর্ষস্তরের একাধিক ক্ষেত্রে অপারেশনাল প্রস্তুতির উপরও জোর দেওয়া হবে। তিনদিনের এই সম্মেলন সশস্ত্র বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হবে, যাতে ক্রমবর্ধমান জটিল ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।’

রবিবার আসাম সফর সেরে নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ কিছুটা পর দমদম বিমানবন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মোদিকে দেখতে ভিড় ছিল বিজেপি সমর্থকদের। ভিড় দেখে গাড়ি থামিয়ে হাত নেড়ে জনসংযোগ সারেন মোদি। সেখান থেকে তার ২৪ গাড়ির কনভয় পৌঁছায় রাজভবনে। সেখানেই রাত্রিবাস করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। তিনি রাত কাটান ফোর্ট উইলিয়ামে।

চলতি বছরে এই নিয়ে চতুর্থবার পশ্চিমবঙ্গে এলেন নরেন্দ্র মোদি। সকাল ৯ টাতেই রাজভবন থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়ামে ছিলেন মোদি। দেড়টার পরে কলকাতা থেকে বিহারের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

একদিকে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অন্যদিকে অস্থির চিন সীমান্ত। তার মধ্যে আবার নেপালে পালাবদল। দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের উত্তরে চিন বিমানঘাঁটি তৈরি করতে চলেছে বলে একটি খবর ছড়ায়। ঘাঁটিটি নাকি আবার তৈরি হবে চিকেনস নেকের কাছেই। সবমিলিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাট এক জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কলকাতার বিজয় দুর্গে সেনা সম্মেলনের আয়োজন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ র ট উইল য় ম মন ত র কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের ঘোষণা

রাজশাহীতে আর্থিক অনিয়ম, অসদাচরণসহ একাধিক অভিযোগে সহকর্মী শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন এবং শিক্ষার্থীদের দিনভর বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হক। আজ রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিতভাবে তিনি এ ঘোষণা দেন। আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব ছাড়বেন বলে পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন।

এর আগে সকালে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে একযোগে আন্দোলনে নামেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সহকর্মী শিক্ষকেরা একটি কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও অসদাচরণের নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এই সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক একরামুল হক শিক্ষার্থী ভর্তি ফি, বিদ্যালয়ের পুকুর ইজারা এবং বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়কে পরীক্ষাকেন্দ্র বা ভেন্যু হিসেবে ভাড়া দেওয়ার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করানোর কথা বলে ৪০ হাজার টাকা আদায় করলেও কোচিং না করিয়ে পুরো অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া তিনি ক্রয় কমিটিকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটা করেছেন এবং এক নারী সহকর্মীর বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অশালীন মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, রাজশাহীর এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলেও একরামুল হক নওগাঁর একটি স্কুলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নওগাঁয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচার চালিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির ভোটার তালিকা জালিয়াতির মতো গুরুতর অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সহকারী শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়টি সবাই জানেন। শিক্ষার্থীরাও তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ। আমরা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই আমরা তাঁর পদত্যাগ চাই।’

শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলনের সময়ই শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। কয়েক দফা অবরুদ্ধ করে রাখে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে দুপুরে প্রধান শিক্ষক মো. একরামুল হক পদত্যাগের লিখিত ঘোষণা দেন।

বিদ্যালয়ের প্যাডে লেখা ঘোষণাপত্রে প্রধান শিক্ষক লিখেছেন, ‘আমি মো. একরামুল হক এই মর্মে অঙ্গীকার করতেছি যে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় ঝামেলা হওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ করে চলে যাব। আমি সজ্ঞানে ও কারও প্ররোচনা ছাড়াই নিম্নে স্বাক্ষর করলাম।’

এই ঘোষণা পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক একরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাকে ঘেরাও করে রেখেছিল, কোনো সহকর্মী এগিয়ে আসেননি। আমি চাপের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছি। এখানে কাজের পরিবেশ নেই, সবাই আমার বিরুদ্ধে। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।’

এই সময়ের মধ্যে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে বদলি করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধান শিক্ষক একরামুল হক। বিষয়টি তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতিকে জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন।

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আগে থেকেই তদন্তাধীন আছে। তবে আজকের বিক্ষোভ বা পদত্যাগের ঘোষণার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর নেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ