মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদক চোরাচালানের জন্য কক্সবাজার সীমান্ত প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ। 

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার শহরের বিজিবি সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব তথ্য তুলে ধরেন।  

আরো পড়ুন:

টেকনাফে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ২

জাকসু নির্বাচনের ২ দিন আগে ডোপ টেস্ট নিয়ে যা বলছেন প্রার্থীরা

সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘‘নাফ নদী ও সাগরপথ হয়ে মহেশখালী, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, আনোয়ারা ও কুয়াকাটা দিয়ে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করছে। ধারণা করা হয়, মোট মাদকের প্রায় ৮০ শতাংশ আসছে সাগরপথে। আগে এটি শুধু অনুমান ছিল, বর্তমানে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মাধ্যমে এ রুট ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারির কারণে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার বাড়ছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত। তবে দুর্গম ভূখণ্ড ও দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এ সীমান্তে নজরদারি কঠিন করে তুলেছে। গত ১৫ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজার রিজিয়নের অধীনস্থ ব্যাটালিয়নসমূহ বিশেষ অভিযানে ২৮ লাখেরও বেশি পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৮১৬ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ, ১৬৮ ক্যান বিয়ার, প্রায় ৩৬৬ লিটার বাংলা মদ এবং ২ কেজি ৪২৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে।’’ 

তিনি জানান, এ সব অভিযানে ১৮৮ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮৯ কোটি টাকা। 

তিনি আরো জানান, শুধু মাদক নয়, এ সময়ে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করেছে বিজিবি। এর মধ্যে রয়েছে দেশীয় এক নলা বন্দুক ৬টি, একে-৪৭ রাইফেল, এসএলআর, জি-৩ রাইফেল, বিদেশি রিভলবার ও গ্রেনেডসহ বিভিন্ন অস্ত্র রয়েছে। আটক হয়েছে ৫ জন অস্ত্রধারী আসামি। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের মূল্য ২২ লাখ টাকার বেশি।

বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত টহল, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদক ও চোরাচালান দমনে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’’ 

সংবাদ সম্মেলনে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান, রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদসহ বিজিবির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/তারেকুর/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র কর ন ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান

জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’

টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।

ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’

টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’

আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’

জাতিসংঘের বিশেষ এই র‍্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’

ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • মাদক চোরাচালানে সহযোগিতা দিচ্ছে আরাকান আর্মি