যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি: জামায়াত নেতা তাহের
Published: 15th, September 2025 GMT
যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, কতগুলো দল, যুগপৎ কর্মসূচি হবে কি না, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। যেহেতু দাবি এক, যারা পিআরের (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) বিষয়ে একমত, প্রতিটি দল নিজ নিজ জায়গা থেকে এই দাবিতে কর্মসূচি দিচ্ছে। সে কারণে এখনো যুগপৎ বলা যাচ্ছে না, সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে আটটি রাজনৈতিক দল যুগপৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে, এমন খবর আলোচনায় আসে। সে প্রসঙ্গেই এ কথা বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, জামায়াত শুরু থেকেই উভয় কক্ষে পিআর চেয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে অংশ নেওয়া ৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে। পার্থক্য হচ্ছে এসব দলের মধ্যে অনেকে উচ্চকক্ষে পিআর চেয়েছে, জামায়াত এবং আরও কিছু দল উভয় কক্ষে পিআর চেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এই নেতা আরও বলেন, যেসব দল পিআরের পক্ষে, সবার সঙ্গে জামায়াত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত সরকারের কাছে মৌখিকভাবে ছোটখাটো দাবি জানাচ্ছে। যদি সরকার এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে, আলাপ-আলোচনার জন্য না ডাকে, তাহলে ধীরে ধীরে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন পিআরের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি বিভ্রান্তিমূলক উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সংবিধানে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হবে, এটি লেখা থাকলেও কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটি লেখা নেই। এখন ট্র্যাডিশনাল (প্রচলিত পদ্ধতি) ও পিআর এই দুই পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব এসেছে। নির্বাচন কমিশন যেমনটা বলছে, সেই ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথাও সংবিধানে নেই। তাই দাবির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আলোচনা করা উচিত। এরপর ফয়সালা হওয়া উচিত। এটি নির্ধারণ না করে একতরফাভাবে আগের নিয়মে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করা অন্যায়।
যুগপৎ কর্মসূচিতে গেলে তাঁদের নিয়ে নির্বাচনী জোট হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচনী জোটের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার। তবে জুলাই চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে একটা বোঝাপড়া নিয়ে নির্বাচন করা যায় কি না, এটি নিয়ে আলোচনা চলছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো বিরোধিতা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, জুলাই সনদের বিষয়ে দুই ধরনের বিরোধিতা আছে। একটি রাজনৈতিক, অন্যটি আইনগত। আইনগত বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণেই কিছুটা আইনগত জটিলতা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে একমত না হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
দাবি আদায়ে মাঠের কর্মসূচির কারণে জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হওয়া নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আশঙ্কার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচনের আগে আরও ৫ মাস সময় আছে। এর মধ্যে এসব দাবি পূরণ করা, জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়া, গণভোটের প্রয়োজন হলে সেটি করা—সবকিছুই এর ভেতরে করা সম্ভব।
আরও পড়ুনঢাকাসহ সারা দেশে তিন দিনের কর্মসূচি দিল জামায়াত৩ ঘণ্টা আগেসরকার কেন জামায়াতের দাবি মানছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরকারের নিজস্ব চিন্তা তারাই ভালো বলতে পারবে। আবার তারা যাতে না মানে, সে জন্য কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তি থেকে চাপ থাকতে পারে। তারা যেহেতু অরাজনৈতিক সরকার, তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নেই, তাই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে তারা অনেক সময়ই এদিক-ওদিক হেলতে পারে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জামায়াত ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।
যে পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো হলো জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জামায়াতের মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ম র জন ত ক প আর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রীবরদীতে ভারতীয় জিরা নিয়ে তুলকালাম
শেরপুরের শ্রীবরদী সীমান্তে ১৬ বস্তা ভারতীয় চোরাই জিরা ও কাপড় আটক করেছেন স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী একটি মহল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সেসব জিরা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে অন্য একটি পক্ষ আবার সেই জিরা আটক করে। এ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার ভায়াডাঙ্গা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে হাসধরা এলাকায় দ্বিতীয়বার আটক হয়। এসময় স্থানীয়রা বেশকিছু বস্তা জিরা লুট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মালামাল উদ্ধার করে তাওয়াকুচা বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, রাত ৯টার দিকে ভারতীয় চোরাই জিরা ও কাপড় বোঝাই একটি ট্রলি ঝিনাইগাতী থেকে ভায়াডাঙ্গা বাজার দিয়ে শ্রীবরদী হয়ে শেরপুরের দিকে যাচ্ছিলো। স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে ট্রলিটি আটক করে। এসময় ট্রলি চালক কৌশলে পালিয়ে যায়।
সেসময় স্থানীয় অপর একটি পক্ষ সুকৌশলে আরেক চালককে দিয়ে ট্রলিটি সরিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে হাসধরা এলাকায় ট্রলিটি আবার আটক হয়। এসময় প্রায় অর্ধেক মালামাল লুট করে এক পক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইমন আকন্দ বলেন, “আমরা ভায়াডাঙ্গা বাজারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন নেতা নতুন করে অন্য ড্রাইভার দিয়ে ট্রলি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা অবৈধ পাচার হওয়া মালামাল জব্দ হোক এটাই চাই। এছাড়াও যারা মালামাল লুট করেছে এবং এই পাচারের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।”
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী তাওয়াকুচা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আতিয়ার রহমান বলেন, “আমরা স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৬ বস্তা অবৈধ মালামাল জব্দ করেছি। এই ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে।”
শ্রীবরদী থানার উপ-পরিদর্শক সুলতান আহমেদ বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই বিজিবি মালামাল জব্দ করেছে। এই ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস