মাদক চোরাচালানে সহযোগিতা দিচ্ছে আরাকান আর্মি
Published: 15th, September 2025 GMT
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক চোরাচালানে সহযোগিতা করছে দেশটির রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিজিবি কক্সবাজারের রামু সেক্টর সদর দপ্তরের সেক্টর কমান্ডার (উপমহাপরিচালক) কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
কক্সবাজারের লাবণী সৈকতে অবস্থিত বিজিবির ঊর্মি গেস্টহাউসের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল মো.
চোরাচালান দমনে বিজিবির সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ রোধ ও সীমান্ত চোরাচালান বন্ধে বিজিবি রাডার, ড্রোন ও নাইট ভিশন ডিভাইসসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যে কারণে বিজিবির অভিযানে মাদক ও অস্ত্রের চালান ধরা পড়ছে। সমুদ্রপথে মানব পাচার রোধেও বিজিবি সক্রিয় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নাফ নদী থেকে ট্রলারসহ বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ, ইয়াবা ও আইসের বড় বড় চালান জব্দ, অস্ত্র পাচার, মানব পাচার, খাদ্যপণ্য পাচারসহ সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, রামু ৩০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলম, রিজিয়ন সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল মো. মফিজুর রহমান ভূঁইয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল এস কে এম কফিল উদ্দিন, সেক্টর সদর দপ্তর রামুর অতিরিক্ত পরিচালক মেজর মো. নাজমুস সাকীব খান প্রমুখ।
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চল মাদক চোরাচালানের জন্য অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে উল্লেখ করে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, উখিয়ার টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদী ও সাগরপথে মাদক (ইয়াবা ও আইস) চোরাচালান হচ্ছে। ৮০ শতাংশ মাদক সাগরপথে উপকূলীয় এলাকা মহেশখালী, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, আনোয়ারা ও কুয়াকাটা দিয়ে পাচার হয়। মিয়ানমারের এই মাদক অন্যান্য দেশেও পাচার হচ্ছে। যা দেশের যুবসমাজ এবং অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি।
সেক্টর কমান্ডার বলেন, সাগরপথে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির সক্ষমতা না থাকলেও গোয়েন্দা ও ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে সহায়তা দিয়ে আসছে বিজিবি। মাদক-অস্ত্র চোরাচালান রোধে বিজিবি জওয়ানেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন টহল দিচ্ছেন। সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় ইতিমধ্যে ৪৭ জন মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আরও ২১ জন মানব পাচারকারীকে ধরার চেষ্টা চলছে। এরপরও দুর্গম পাহাড়ি পথ, ঘন জঙ্গল, নদী ও বিশাল সমুদ্র দিয়ে মাদক চোরাচালান ও মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে।
সংবাদ সম্মেলনে গত ১৫ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই মাসের ১৪৭টি পৃথক মাদকবিরোধী অভিযানে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এই দুই মাসে পৃথক অভিযানে ৮৮ কোটি টাকা মূল্যের ২৮ লাখ ২০৯টি ইয়াবা, ৮১৬ গ্রাম আইসসহ ১৮৮ জন চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময় ২২টি অস্ত্রসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাচারের সময় ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার মূল্যে ২২৬টি গরু এবং ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করা হয়। গত এক বছরে সেক্টরের আওতাধীন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৬টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৩২১ কোটি ৯০ লাখ ৫১ হাজার ১১৬ টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ করেছিল। যা গত ১৪ আগস্ট কক্সবাজার সদর বিজিবি ব্যাটালিয়নের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে ধ্বংস করা হয়।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নাফ নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া ২২৮ জন বাংলাদেশি জেলেকে এ পর্যন্ত আরাকান আর্মি অপহরণ করেছে। বিজিবির প্রচেষ্টায় ১২৪ জনকে ফেরত আনা হয়েছে। বর্তমানে ১২টি ট্রলারসহ ১০৪ জন জেলে আরাকান আর্মির হাতে আটক রয়েছে। আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে আটকে থাকা জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দেরি হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মাদক ও অস্ত্র মিয়ানমার থেকে আনা হচ্ছে বলে জানান কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বেশির ভাগ মাদক-অস্ত্র রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মজুত হচ্ছে। মূল হোতাদের ধরা গেলে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা দরকার।
সেক্টর কমান্ডার বলেন, গত জানুয়ারি থেকে সীমান্তে ২৩টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিজিবি মাইন বিস্ফোরণে আহত ১৭ ব্যক্তিকে আর্থিক সহায়তা ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে। মাইন বিস্ফোরণের বিষয়ে সীমান্ত জনপদের লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি সীমান্তের যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজনও করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম ম নব প চ র কর ন ল ম সহয গ ত
এছাড়াও পড়ুন:
৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে
ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মাত্র ১২৭ রানে অলআউট হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আরও কম, ১২৫ রানে। কিন্তু রোববার (০২ নভেম্বর) তারা চোখে চোখ রেখে লড়াই করল আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
আগে ব্যাট করে ৩ উইকেটে আফগানদের করা ২১০ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করে হার মানে মাত্র ৯ রানে। দুই ইনিংসে রান হয়েছে মোট ৪১১টি। যা আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ।
আরো পড়ুন:
কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস
ফাইনালে দ. আফ্রিকাকে ২৯৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
স্বাগতিকরা থেমে থেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ব্রিয়ান বেনেট, সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্ল ও তাশিনগা মুসেকিওয়ার ব্যাটে লড়াই করে শেষ বল পর্যন্ত। বেনেট ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪৭ রান। অধিনায়ক রাজা ৭টি চার ও ২ ছক্কায় করেন ৫১ রান। বার্ল ১৫ বলে ৫ ছক্কায় খেলেন ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস। আর মুসেকিওয়া ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ২৮ রান।
বল হাতে আফগানিস্তানের আব্দুল্লাহ আহমদজাই ৪ ওভারে ৪২ রানে ৩টি উইকেট নেন। ফজল হক ফারুকি ৪ ওভারে ২৯ রানে ২টি ও ফরিদ আহমদ ৩ ওভারে ৩৮ রানে নেন ২টি উইকেট।
তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ১৫.৩ ওভারে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন। এই রানে গুরবাজ আউট হন ৪৮ বলে ৮টি চার ও ৫ ছক্কায় ৯২ রানের ইনিংস খেলে। মাত্র ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। ১৬৩ রানের মাথায় ইব্রাহিম আউট হন ৭টি চারে ৬০ রান করে। এরপর সেদিকুল্লাহ অটল ১৫ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংস খেলে দলীয় সংগ্রহকে ২১০ পর্যন্ত নিয়ে যান।
বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্রাড ইভান্স ৪ ওভারে ৩৩ রানে ২টি উইকেট নেন। অপর উইকেটটি নেন রিচার্ড এনগ্রাভা।
৯২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন গুরবাজ। আর মোট ১৬৯ রান করে সিরিজ সেরা হন ইব্রাহিম জাদরান।
ঢাকা/আমিনুল