নারায়ণগঞ্জ জেলার আন্দোলন উপ-পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সিডও দিবস উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়াস্থ সংগঠন কার্যালয়ে "নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় চাই অভিন্ন পারিবারিক আইন" এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি রীনা আহমেদ। 

এসময় বক্তারা বলেন- নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সনদটি কার্যকর হতে শুরু করে। সিডও একমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সনদ, যা শুধু নারী সংক্রান্ত।এই সনদে মোট ৩০টি অনুচ্ছেদ বা ধারা রয়েছে। 

এর মধ্যে প্রথম ১৬টি অনুচ্ছেদে নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য চিহ্নিত করা হয়েছে এবং পরের ১৪টি অনুচ্ছেদে সেই বৈষম্য দূরীকরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সিডও সনদে স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে। 

নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে সমানাধিকারের বিষয়ে সিডও সনদের ২ ও ১৬ (১) (গ) দুটি ধারায় সংরক্ষণ বহাল রেখেছে বাংলাদেশ। এই ধারার সংরক্ষণ এখনো রহিতকরণ হয়নি। ফলে প্রকৃত সমতা নিশ্চিত হচ্ছে না। 

নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদনের জন্য চলমান সামাজিক আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সকল পর্যায়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি। মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। 

সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার যে চিত্র প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা প্রতিরোধ করতে হলে সিডও সনদের বাস্তবায়ন জরুরি।  রাষ্ট্রকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। সিডও সনদ বাস্তবায়ন করা হলে নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

অভিন্ন পারিবারিক আইন বলতে সকল ধর্মের মানুষের জন্য প্রযোজ্য একটি সাধারণ পারিবারিক আইন বোঝায়। এই আইনে বিয়ে, তালাক, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে সকল ধর্মের মানুষের জন্য একই নিয়মকানুন থাকবে। বর্তমানে বিভিন্ন ধর্মের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পারিবারিক আইন প্রচলিত আছে, যা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বৈষম্যমূলক।

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই বৈষম্য দূর করা এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হয়। বক্তারা সকলে একমত হয়েছেন যে- এই বিষয়ে শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে প্রচার চালাতে হবে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সকল শ্রেণীর নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে। রাষ্ট্রকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

সভায় লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন- সাধারণ সম্পাদক রহিমা খাতুন, মতবিনিময় করেন- আন্দোলন সম্পাদক সাহানারা বেগম, খেলাঘরের জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, পরিবেশ রক্ষা  ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোঃ হোসাইন, নারী শিল্প উদ্যোক্তা মুনমুন আসকারী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মহসিন, আইনজীবী আয়েশা আখতার, সিনিয়র শিক্ষক নিগার সুলতানা পলি প্রমূখ।  

পরিচালনা করেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক শাশ্বতী পাল। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশাজীবী: আইনজীবী(নারী ও পুরুষ), নারী শিল্প উদ্যোক্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্রীসহ জেলা ও পাড়া কমিটির অর্ধশতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করেন।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ভ ন ন প র ব র ক আইন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট
  • সদরে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পইন উপলক্ষে ওরিয়েন্টেশন সভা
  • বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড