বাংলাদেশের হাই-টেক পণ্য উৎপাদন খাতে অনন্য এক মাইলফলক অর্জিত হলো। দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন প্রথমবারের মতো আমেরিকাতে রপ্তানি শুরু করল মাদারবোর্ড (পিসিবি ও পিসিবিএ)।

ওয়ালটনের তৈরি বিশ্বমানের এই মাদারবোর্ড ব্যবহৃত হবে আমেরিকায় তৈরি অত্যাধুনিক সক্রিয় গানশট শনাক্তকরণ এবং জরুরি উদ্ধারকাজ পরিচালনা সিস্টেমের সিকিউরিটি ডিভাইসে। মানুষের জীবন রক্ষাকারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জামে ওয়ালটন হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হওয়া বাংলাদেশের হাই-টেক পণ্য উৎপাদন খাতের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও সম্মানের। আমেরিকাতে মাদারবোর্ড রপ্তানির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বমানের বাংলাদেশি প্রযুক্তিপণ্যের বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করল ওয়ালটন।

আরো পড়ুন:

ওয়ালটন লিফট এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তাহসান

ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স পরিদর্শন করলেন বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ স্কুলের প্রতিনিধি দল

এই উপলক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে জানানো হয়, বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি করা ওয়ালটন প্রাথমিকভাবে আমেরিকার উইসকনসিন প্রদেশে অবস্থিত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন এর অনুকূলে প্রায় ২,৫০০ পিসেরও বেশি মাদারবোর্ড রপ্তানি করছে, যা প্রায় ২.

৫ মিলিয়ন বাংলাদেশি টাকার সমপরিমাণ। জরুরি অবস্থায় আমেরিকার স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের মানুষের জীবন রক্ষায় কার্যকর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরবরাহে সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশনের ব্যাপক সুনাম ও অবদান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ডিভাইসে এবার যুক্ত হলো বাংলাদেশের ওয়ালটনের হার্ডওয়্যার।

বাংলাদেশের একমাত্র পিসিবি (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। মাদারবোর্ড হিসেবে পরিচিত প্রযুক্তিপণ্যের অন্যতম প্রধান যন্ত্রাংশ ওয়ালটনের পিসিবিএ দিয়ে তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ নিরাপত্তা ডিভাইস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হবে। এই ডিভাইস তাৎক্ষণিক অবৈধ শুটিং শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, সতর্কীকরণ ও দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করায় সহযোগিতা করবে। এটি অডিও এবং ভিজ্যুয়াল সংকেতের মাধ্যমে সতর্ক করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিপদ থেকে দ্রুততার সাথে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে এবং হুমকির প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।

বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে আরো ছিলেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এম মঞ্জুরুল আলম অভি, ওয়ালটন মাইক্রো-টেক করপোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নিশাত তাসনিম শুচি এবং রবি আজিয়াটার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এক্সেনটেকের এমডি ও সিইও আদিল হোসেন নোবেল।

এছাড়া অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট পল এল একারট।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, “যে দেশে সিলিকন ভ্যালী আছে, সেই দেশে আমরা মাদারবোর্ড রপ্তানি করছি। নিঃসন্দেহে এটি ওয়ালটন এবং বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।”

তিনি বলেন, “পিসিবি এবং পিসিবিএ গ্লোবাল মার্কেট প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী ৫-৬ বছরে গ্লোবাল মার্কেট আরো ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে। আমেরিকায় পিসিবিএ রপ্তানির মধ্য দিয়ে এই বিশাল গ্লোবাল মার্কেটে যাত্রা শুরু করেছে ওয়ালটন।”

প্রযুক্তি পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগি সক্ষমতায় এগিয়ে যেতে ওয়ালটনকে হার্ডওয়্যার ডিভাইসের পাশাপাশি এআই প্রযুক্তিভিত্তিক সফটওয়্যার পণ্য, নেটওয়ার্কিং ও সাইবার সিকিউরিটি ডিভাইস তৈরির মাধ্যমে এক শক্তিশালী ইকো-সিস্টেম গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও উন্নত দেশ আমেরিকা বাংলাদেশ থেকে মাদারবোর্ডের মতো উন্নত প্রযুক্তি পণ্য আমদানি করছে। এটা শুধু ওয়ালটনের জন্যই নয়; বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত গর্বের এবং ঐতিহাসিক সাফল্য।”

আমেরিকার সেফপ্রো টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট পল এল একারট বলেন, “ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে ওয়ালটন ইনোভেশন, কোয়ালিটি ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ওয়ালটন প্রতিটি পণ্যের ডিজাইন, নতুন উদ্ভাবন এবং উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি ওয়ালটনকে অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ওয়ালটন বিশ্ববাজারে সম্মানজনক স্থান করে নিয়েছে। ওয়ালটনের কাছ থেকে বিশ্বমানের মাদারবোর্ড নিতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত।ওয়ালটনের মাদারবোর্ড নিঃসন্দেহে আমাদের সিকিউরিটি ডিভাইসের মান আরো অনেক বৃদ্ধি করবে।”

বাংলাদেশকে প্রযুক্তিপণ্যের হাব হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করায় তিনি ওয়ালটনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সিকিউরিটি ডিভাইসসহ টেকসই প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রেও ওয়ালটন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমেরিকার এই উদ্যোক্তা উল্লেখ করেন।

এস এম রেজাউল আলম বলেন, “আমরা নিজস্ব প্রোডাকশন প্ল্যান্টে বিশ্বমানের পিসিবি ও পিসিবিএ তৈরি করছি যা ওয়ালটনের পণ্যসমূহে ব্যবহার করা হচ্ছে।নিজস্ব চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বাজারেও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি উদোক্তাদের জন্য পিসিবি ও পিসিবিএ সরবরাহ করে আসছে ওয়ালটন।”

“সম্প্রতি ইউরোপিয়ান দেশ গ্রিসেও সাফল্যের সাথে ১০ হাজার পিসেরও বেশি পিসিবি ও পিসিবিএ রপ্তানি সম্পন্ন করেছে ওয়ালটন। বাংলাদেশেই উন্নতমানের পিসিবি ও পিসিবিএ উৎপাদনের ফলে একদিকে যেমন সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা, সেইসঙ্গে দ্রুততম সময়ে দেশীয় উদ্যোক্তাগণ পাচ্ছেন তাদের চাহিদামত পণ্য। পাশাপাশি অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের মতো পিসিবি ও পিসিবিএ রপ্তানি করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগানে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে ওয়ালটন।”

তিনি জানান, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে একীভূত হচ্ছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি এবং ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ইলেকট্রনিক্স এবং প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতের শীর্ষ এই দুই প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণে দেশে ব্যাপক আকারে ইলেকট্রিক বাইক এবং লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে যাওয়া সহজ হবে।

অনুষ্ঠানে নতুন বাজারে আসা ওয়ালটনের দুই মডেলের পরিবেশবান্ধব তাকিওন ইলেকট্রিক বাইক বা ই-বাইকও উন্মোচন করেন অতিথিরা। আধুনিক ডিজাইন, শক্তিশালী মোটর, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং মাত্র ১০-১৫ পয়সা খরচে প্রতি কিলোমিটারে চলার সুবিধাযুক্ত ওয়ালটনের নতুন এই ই-বাইকগুলো নগর ও গ্রামীণ জীবনের স্মার্ট ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াত সঙ্গী হয়ে উঠবে। 

ঢাকা/সাহেল/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম দ রব র ড র হ র ডওয় য র ব শ বম ন র অন ষ ঠ ন আম র ক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, তেহরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে ‘আরো শক্তিশালী করে’ পুনর্নির্মাণ করবে। রবিবার সরকারি সংবাদমাধ্যমকে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তার দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধান করছে না।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালিয়েছিল সেগুলো পুনরায় চালু করার চেষ্টা করলে তেহরান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে হামলার নির্দেশ দেবেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “ভবন ও কারখানা ধ্বংস আমাদের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করবে না, আমরা আরো শক্তির সাথে পুনর্নির্মাণ করব।”

জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল। ওই সময় ওয়াশিংটন বলেছিল, স্থাপনাগুলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যেএকটি কর্মসূচির অংশ ছিল। তবে তেহরান জানিয়েছিল, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক উদ্দেশ্যে।

ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ান বলেছেন, “এগুলো জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য, রোগের জন্য, জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ