১০ দফা বিলীনের পর ফের এক দম্পতির বাড়ি ভাঙনের কবলে
Published: 16th, September 2025 GMT
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলওয়ালপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরের সিদ্দিক ঢালীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন সরদার ও মারুফা বেগম দম্পতির বসতবাড়ি এ পর্যন্ত ১০ দফা ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁদের বসতবাড়িটি আবারও ভাঙনের কবলে পড়েছে।
ভাঙনের কবল থেকে বাড়িটি রক্ষা করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। ওই পরিবারটি এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদী প্রবাহিত হয়েছে। মেঘনার তীরবর্তী আলওয়ালপুর ইউনিয়নের মরণ চৌকিদারকান্দি, সিদ্দিক ঢালীকান্দি, অলি সরদারকান্দি ও জহু ব্যাপারীরকান্দি গ্রাম অবস্থিত। গত জুলাই মাসের ভাঙনে গ্রামগুলোর ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছেন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো সরকারের বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছে। ওই চারটি গ্রামের অন্তত ১ হাজার ২০০ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সিদ্দিক ঢালীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন সরদারের বয়স (৭৫) বছর। তিনি চাঁদপুরের ঈশানবালার বাসিন্দা ছিলেন। ঈশানবালায় বসবাস করা অবস্থায় চার দফা মেঘনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে তিনি নিঃস্ব হন। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালের দিকে গোসাইরহাটের মেঘনা নদীর চর গরিবের চরে বসতি গড়ে তোলেন। গরিবেরচর এলাকায় ছয় দফা ভাঙনের কবলে পরে আবারও নিঃস্ব হন তিনি। বর্তমানে তিনি সিদ্দিক ঢালীকান্দি এলাকায় স্ত্রী মারুফা আক্তারকে নিয়ে বসবাস করছেন। বাড়ির একটি ঘর ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। যে ঘরটিতে তিনি বসবাস করেন তারও অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে ঘরের বারান্দায় বসবাস করছেন।
মারুফা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, আমাদের সংসারে ৬ মেয়ে ও এক ছেলে আছে। মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পর স্বামীর বাড়িতে থাকেন। আর ছেলে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করে। নদীর তীরে বাড়ি হওয়ায় ভয়ে সে গ্রামে আসে না। আমরা দুই বুড়া–বুড়ি নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে যাওয়া ঘরটিতে থাকি। যতক্ষণ ঘরে থাকি দুশ্চিন্তা আর আতঙ্ক নিয়ে থাকি। কখন যেন আমাদেরসহ ঘরটি নদীতে চলে যায়। এমন আতঙ্ক নিয়ে বাঁচা যায়?
হুমায়ুন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, আমি মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। পৈতৃক জমিতে চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। ১০ দফা নদীভাঙনের কবলে পড়ে এখন আমি নিঃস্ব। অল্প জমির ওপর একটি বসতবাড়ি রয়েছে তা–ও ভাঙনের কবলে। আমার ঘরের মধ্যে নদী চলে এসেছে। এ বয়সে বাড়িটি নদীতে চলে গেলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব?
আলওয়ালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাদেম দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন থেকেই এ এলাকায় মেঘনা নদী ভাঙছে। এ বছর যারা গৃহহীন হয়েছেন, তাঁরা বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নিয়েছেন। আমার ওয়ার্ডের হুমায়ুন সরদার একটি মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন। তিনি এ পর্যন্ত ১০ দফা ভাঙনের কবলে পড়েছেন। এখন তাঁর ঘরের অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। বাকি থাকা ঘরের বারান্দায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তাঁকে বলেছিলাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নিতে। কিন্তু তিনি বাড়ি ফেলে যেতে রাজি হচ্ছেন না।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর মেঘনার কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ২০২৩ সালে ওই এলাকায় কিছু অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। এ বছর এখনো ভাঙন ঠেকাতে সেখানে কোন উদ্যোগ নিতে পারিনি। তবে একটি প্রকল্পের আওতায় মেঘনার ভাঙনকবলিত এলাকায় বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
গোসাইরহাটের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানিয়া বিনতে আফজল প্রথম আলোকে বলেন, গোসাইরহাটের যেসব এলাকায় মেঘনার ভাঙন রয়েছে সে স্থানগুলো আমরা পরিদর্শন করেছি। পাউবোকে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যারা ভাঙনের শিকার বা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁরা কেউ সহায়তা চাইলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ম য় ন সরদ র প রথম আল ক গ স ইরহ ট প রকল প ম ঘন র এল ক য় পর ব র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান