বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিম চৌধুরীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। এমনকি এনায়েত করিমের নিরাপত্তায় নিজের দেহরক্ষীকে (একজন পুলিশ সদস্য) নিয়োজিত করেছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের সময় ওই দেহরক্ষী এনায়েত করিমের সঙ্গেই ছিলেন। দেহরক্ষীকে এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে ডিআইজির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার পর এনায়েত করিম দুদিন একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ছিলেন। ওই হোটেল বুকিং ও তার ভাড়া পরিশোধ করেছিলেন জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী অংশের মহাসচিব পরিচয় দেওয়া কাজী মামুনুর রশিদ। গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম এসব তথ্য দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রমনা থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল সোমবার ওই মামলায় আদালত এনায়েত করিমকে রিমান্ডে নিয়ে ৪৮ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো.

শফিকুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর প্রথম আলোকে বলেন, এনায়েত করিমকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিষয়ে জানা গেছে। তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে ওই সব সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এখন পর্যন্ত এনায়েত করিমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, এনায়েত করিম ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর স্বপ্ন দেখিয়ে, কখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল ডিনারে আমন্ত্রণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিনি নেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও অনেক নেতার কাছ থেকে অর্থ নেন। ২০১৮ সালের পর বিএনপিপন্থী এক সাংবাদিক নেতা এবং নবগঠিত একটি দলের নেতার সঙ্গে সখ্য গড়েও এনায়েত করিম প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। এই দুজনের সঙ্গে এখনো এনায়েত করিমের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলেও (২০০১-০৬ সাল) একবার এনায়েত করিমকে প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এনায়েত করিমের প্রতারণার বিষয়ে একটি সূত্র জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একজনকে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে কয়েকজন র‍্যাব কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসে। তখনো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচানোর নামে এনায়েত করিম অনেক সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনবিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা সেই এনায়েত করিমকে মিন্টো রোড থেকে গ্রেপ্তার১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫জাতীয় পার্টির নেতা যা বললেন

জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী অংশের মহাসচিব হিসেবে পরিচয় দেওয়া কাজী মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এনায়েত করিমের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্কও দীর্ঘদিনের। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গেও এনায়েত করিমের সখ্য ছিল। এনায়েত করিম বাংলাদেশে এলে এরশাদের সঙ্গে দেখা করতেন। মূলত পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণেই এনায়েত করিম বাংলাদেশে এলে তিনি আপ্যায়ন করতেন। এবারও তিনি হোটেল বুকিং ও ভাড়া পরিশোধ করেছেন। মামুনুর রশিদ যখন যুক্তরাষ্ট্রে যান, তখন এনায়েত করিম তাঁকে আপ্যায়ন করেন। এখানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক ছাড়া অন্য কিছু নেই।

কাজী মামুনুর রশিদ দাবি করেন, এনায়েত করিমের বিদেশি সংস্থার এজেন্ট পরিচয় দেওয়া বা প্রতারণার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। সরকার পতনের ষড়যন্ত্র বা অন্য কোনো বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না।

আরও পড়ুনবিদেশি সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিমের ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ডিআইজির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির সহায়তায় শনিবার এনায়েত করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন এনায়েত করিম একটি প্রাডো গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে মিন্টো রোড এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন। ওই প্রাডো গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছিলেন পুলিশে কর্মরত একজন ডিআইজি। পদাধিকার বলে ওই ডিআইজির নিরাপত্তার জন্য একজন দেহরক্ষী (একজন পুলিশ সদস্য) নিয়োজিত থাকেন। এনায়েত করিমকে গ্রেপ্তারের সময় প্রাডো গাড়িতে ওই দেহরক্ষীও ছিলেন। দেহরক্ষী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তিনি কেবল ডিআইজির নির্দেশনা পালন করেছেন।

২০২১ সালের ২১ মার্চ প্রকাশিত প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এনায়েত করিম বিএনপিসহ একাধিক দলের বিভিন্ন নেতাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তখন তিনি তাঁদের কাছে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সংস্থার লোক বলে পরিচয় দেন। তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এনায়েত করিম ব্যাংকক ও নেপালে একাধিক বৈঠকও করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, ব্যাংককের বৈঠকে চাকরিচ্যুত এবং অবসরপ্রাপ্ত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানো ডিআইজিও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র কর মকর ত রক ষ ক র ড আইজ র দ হরক ষ এক ধ ক ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন