উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম রাতেই যেন ফুটবলপ্রেমীরা এক অসাধারণ ম্যাচের সাক্ষী হলো। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তুরিনে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে জুভেন্টাস ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ৪-৪ গোলে ড্র করেছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ডর্টমুন্ডের জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখনই জুভেন্টাসের নাটকীয় প্রত্যাবর্তনে সবাই হতবাক হয়ে যায়।

ম্যাচের নায়ক ছিলেন জুভেন্টাসের সেই খেলোয়াড় যাকে ক্লাব এই গ্রীষ্মে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল, দুসান ভ্লাহোভিচ। ২৫ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান ফরোয়ার্ড বদলি হিসেবে নেমে যেন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। দুটি গোল করার পাশাপাশি ইংরেজ ডিফেন্ডার লয়েড কেলির গোলে সহায়তাও তিনিই করেছেন। নির্ধারিত সময়ের পরও যখন ডর্টমুন্ড ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল, সেই অবস্থায় শেষ মুহূর্তে এই অবিশ্বাস্য ড্র নিশ্চিত করেন ভ্লাহোভিচ।

আরো পড়ুন:

এমবাপ্পের জোড়া গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের রোমাঞ্চকর জয়

মেসির গোলে, অ্যাসিস্টে মায়ামির জয়

ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলতে থাকে। ৫২তম মিনিটে ডর্টমুন্ডের করিম আদেয়েমি বাম পায়ের শটে বক্সের বাইরে থেকে প্রথম গোলটি করে দলকে এগিয়ে দেন। এরপরই জুভেন্টাসের তরুণ তারকা কেনান ইলদিজ ডান দিক থেকে নেওয়া এক শটে বল জালে জড়িয়ে সমতা ফেরান। কিন্তু জুভেন্টাস সমর্থকদের এই আনন্দ খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কারণ, মাত্র এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে আদেয়েমি আবার মাঠে ঝলসে ওঠেন এবং তার পাস থেকে ফেলিক্স এনমেচা বক্সের বাইরে থেকে ডর্টমুন্ডের দ্বিতীয় গোলটি করে বসেন।

ম্যাচের এমন টানটান উত্তেজনার মধ্যেই ৬৭তম মিনিটে ইলদিজ দুর্দান্ত একটি পাস বাড়িয়ে দেন ভ্লাহোভিচের দিকে। ভ্লাহোভিচ ডান পায়ের শটে সহজেই গোল করে স্কোর ২-২ করেন। এরপর আবার ডর্টমুন্ড এগিয়ে যায়। ৭৪তম মিনিটে ইয়ান কৌটো এবং ৮৬তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে বেনসেবাইনি গোল করেন। লয়েড কেলির হ্যান্ডবলের কারণে এই পেনাল্টি পেয়েছিল ডর্টমুন্ড। যখন মনে হচ্ছিল, ডর্টমুন্ড ৪-২ গোলে জয়ী হতে চলেছে, ঠিক তখনই ভ্লাহোভিচ জুভেন্টাসকে বাঁচিয়ে দিলেন।

ম্যাচের ৯০+৩ মিনিটে ডর্টমুন্ডের জয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন পিয়ের কালুলুর ক্রস থেকে ভ্লাহোভিচ ৯০+৪ মিনিটে সরাসরি শটে গোল করে ব্যবধান ৪-৩ করেন। এবং নাটকীয়তার শেষ এখানেই নয়! ৯৬তম মিনিটে জুভেন্টাসের কেলি গোল করে বসেন এবং ৪-৪ সমতা ফেরান। শেষ পর্যন্ত এই সমতা নিয়েই শেষ হয় ম্যাচ।

দুই দলের এমন গোল উৎসব চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই নিয়ে সপ্তমবার ঘটল, যেখানে উভয় দলই অন্তত চারটি করে গোল করেছে।

এবারের লিগ-পর্বের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শীর্ষ আটটি দল সরাসরি শেষ ষোলোতে যাবে এবং পরের ১৬টি দল দুই লেগের প্লে-অফ খেলবে। সেই প্লে-অফ থেকে আরও আটটি দল শেষ ষোলোতে সুযোগ পাবে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল চ য ম প য়নস ল গ গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

২৫ বছর ধরে আতর–সুরমা বিক্রি করেন ৭৫ বছরের খোরশেদ

হাটের ব্যস্ততা কমে এসেছে। বেলা বাড়ায় বিকিকিনির কোলাহল যখন প্রায় শেষের পথে, ঠিক তখনই চোখে পড়ে এক দৃশ্য। হালকা আকাশি রঙের পোশাকে এক বয়োবৃদ্ধ মানুষ কালো ব্যাগ থেকে আতরের শিশি বের করে পরম মমতায় কারও না কারও কবজিতে লাগিয়ে দিচ্ছেন। তিনি ৭৫ বছর বয়সী মো. খোরশেদ আলম।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কলাহাটে প্রতি হাটবারে দেখা মেলে খোরশেদের। ফজরের পর হাট জেগে উঠলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় কমে আসে। ঠিক তখনই খোরশেদ আলমকে দেখা গেল। হাটে আসা প্রবীণ থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রাকচালক—সবাই তাঁর পরিচিত। কেউ হাতে আতর মেখে নেন, কেউ চোখে সুরমার শীতল পরশ বুলিয়ে নেন। বিনিময়ে ভালোবেসে হাতে গুঁজে দেন ৫ বা ১০ টাকার নোট। এই সামান্য আয়েই চলে তাঁর জীবন। তিনি টানা ২৫ বছর ধরে এভাবেই জীবন চালাচ্ছেন।

কারও ওপর নির্ভরশীল নন বানেশ্বরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম। আয়রোজগার নিয়ে জানতে চাইলে মুখে নির্মল হাসি ফুটিয়ে বলেন, ‘প্রতিদিন সুরমা আর আতর বেচে খরচ বাদে ২৫০ টাকার মতো থাকে। মানুষ ভালোবেসে ১০ টাকা, ২০ টাকা দেন।’

খোরশেদ আলমের সংসারে এখন আছেন কেবল স্ত্রী। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

কীভাবে এই সুগন্ধির ব্যবসায় এলেন—জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘একটা বয়স পর্যন্ত গায়ে-গতরে খাটতে পারতাম। যখন দেখলাম শরীরে আর শক্তি নেই, হাতেও কোনো টাকাপয়সা নেই, তখন এই ব্যবসার কথা মাথায় এল। আমি সেই একাত্তর সাল থেকে আতর ব্যবহার করি। অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। ভাবলাম, এটাকেই জীবিকা করি। সেই থেকে এই ব্যাগ হাতে নিয়েছি।’

খোরশেদ আলমের ব্যবসার মূল পণ্য আতর আর সুরমা। শুধু লাগিয়েই দেন না, কেউ চাইলে বিক্রিও করেন। তাঁর ভাষায়, আতর দিলে একটা সুগন্ধি আসে, মনে শান্তি লাগে। তখন নিজেকে পবিত্র মনে হয়। আর সুরমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, হাদিসেও সুরমা ব্যবহারের কথা বলা আছে।

চোখে সুরমা লাগিয়ে নিচ্ছিলেন ট্রাকচালক মো. মহাসিন। কলার ট্রাক নিয়ে তিনি কুমিল্লায় যাবেন। মহাসিন বলেন, ‘আমি প্রায়ই চাচার কাছ থেকে চোখে সুরমা দিই। এতে চোখ ঠান্ডা থাকে, দেখতেও ভালো লাগে। এটা তো নবীর সুন্নত। মাঝেমধ্যে আতরও কিনি।’

খোরশেদ আলম বললেন, শুধু বানেশ্বর হাটেই নয়, বিভিন্ন হাটবাজার, গ্রামগঞ্জ, এমনকি রাজশাহী ও নাটোর কোর্ট চত্বরেও তিনি এই আতর-সুরমা ফেরি করেন। তিনি বলেন, ‘এই বয়সে যদি এটা না করতাম, তাহলে কে মুখে ভাত তুলে দিত? এই যে ঘুরিফিরি, এতে শরীরটাও এখনো ঠিক আছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করি না: লুৎফে সিদ্দিকী
  • ২৫ বছর ধরে আতর–সুরমা বিক্রি করেন ৭৫ বছরের খোরশেদ