ময়মনসিংহ নগরে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, এক বৃদ্ধের মৃত্যু
Published: 23rd, October 2025 GMT
ময়মনসিংহ নগরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি মাসে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আনোয়ারুল হক (৭২) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থার তাঁর মৃত্যু হয়।
আনোয়ারুল হক ময়মনসিংহ নগরের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৫ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তাঁর শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুনময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর মৃত্যু০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সহকারী ফোকাল পারসন মোস্তফা ফয়সাল রাহাত জানান, ওই বৃদ্ধ রোগী এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ডেঙ্গুর পাশাপাশি বৃদ্ধের হার্টে সমস্যা ধরা পড়ে এবং হার্টেও জটিলতা ছিল।
এর আগে গত রোববার রাতে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পশ্চিম দাপুনিয়া এলাকার মো.
হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৭৯ রোগী ভর্তি আছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ সকাল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি হয় এক হাজার ২১০ জন। এসব রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে একজনের মৃত্যুর পর সেপ্টেম্বরে ৫ জন এবং চলতি মাসে ৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়। এই বছরের মধ্যে চলতি মাসেই সর্বোচ্চ ৫১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ২৪টি শয্যা থাকলেও আজ সকাল পর্যন্ত ৭৯ রোগী ভর্তি আছেন। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা জানিয়েছেন হাসপাতালটির ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ফোকাল পারসন একমাদ উল্লাহ খান।
এদিকে ময়মনসিংহ শহরে ডেঙ্গুর বিস্তার শুরুর পর মশকনিধন কার্যক্রম শুরু করে সিটি করপোরেশন। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এইচ কে দেবনাথ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলো নেওয়া হচ্ছে। শহরজুড়ে ১১টি মাইক দিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা ও লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে। জনগণ সচেতন না হলে এটি পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্ক: নোটিশের জবাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন সেই চিকিৎসক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ার পর তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নোটিশের জবাব দেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শোকজের চিঠি হাতে পেয়ে আজ বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জমা দিয়েছি। ডিজি বয়স্ক মানুষ, আমারও বেয়াদবি হয়েছে। শোকজের জবাবে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমতা চেয়েছি।’
গতকাল শনিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে আসেন স্বাস্থ্যের ডিজি আবু জাফর। সেমিনারে যোগ দেওয়ার আগে তিনি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। চলতি বছরের জুলাই মাসে আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান তিনি। গতকালের ঘটনায় তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এসে কী কী সমস্যা, সেগুলো জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এ নিয়ে কথা বলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুরা সব অধ্যাপক হয়ে গেছে। আমার চাকরিজীবন শেষ; কিন্তু আমার হয়নি বিভিন্ন কারণে। এ জন্য আমার চাকরি থেকে সাসপেনশন হলে আমি খুশি হই।’
আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি, শোকজ১৭ ঘণ্টা আগেএ ঘটনায় গতকাল বিকেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসদাচরণ করায় ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে শোকজ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌসের দেওয়া নোটিশের জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে বলা হয়। এরপর আজ তিনি শোকজের জবাব দেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইনউদ্দিন খান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওই চিকিৎসককে শোকজ করেছি, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তাঁর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ালেন চিকিৎসক, বললেন ‘আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম’২২ ঘণ্টা আগে